বনপুকুরের সেই সাঁওতাল মেয়েটি

লিখেছেন:ঝিলিক চক্রবর্তী দত্ত

বনপুকুরের সেই সাঁওতাল মেয়েটি -
কাস্তে হাতে ধান কাটে;
মস্ত শাল গাছটার নিচে জিরিয়ে নেয় খানিক;
আবার ধানের গুছি হাতে ধরে কাস্তে চালায়।
দাওয়ায় বসে শক্ত করে বেতের বুনন;
ফুল লতা পাতার নকশা তোলে নিকনো মাটির দেওয়ালে;
কালো দীর্ঘ কেশ এলিয়ে গুনগুন সুর তার বাহারি ফুলের ঝোপে;
পরবের দিনে মাদলের বোলে ছন্দ ওঠে নিটোল পা দুটিতে;
পলাশের রাঙ্গা আভায় বাদামি হয় মুখখানি;
ঝরে যাওয়া পলাশ দিয়ে মালা গাঁথে;
গান গেয়ে ওঠে -
"লিলো সেড়েমা রিলো মালা বালে মুলু চান্দ লেকা"
 

ফাগুন চলে যায়,
বৈশাখী মেঘে মেয়ের মুখখানি আরো কালো দেখায়,
বনপুকুরের হাওয়াতে কথা ভাসে,
কারা যেন তছনছ করতে চায় সে গ্রামের মাঠ জমিন;
দামাল কালবৈশাখী উড়িয়ে নেয় আকাশের কালো মেঘ,
ফুলমনিদের ঘর গিয়েছে;
মনুয়ার বাপকে খুঁজে পাওয়া যায় না আর;
সাঁওতাল মেয়ের বুক কাঁপে ভয়ে,
যেদিন ঘরের বাঁশগুলিকে একটা একটা করে ছুড়ে ফেলেছিল ওরা-
মেয়েটি উঠানের এক কোনায় বসে নিষ্পলক চোখে দেখেছে;
ঝড়ের তান্ডবে উথাল পাথাল হয়েছে বুকের পাঁজর;
 

সূর্য উঠল একদিন,
মারাংবুরুর থানে জমায়েত হয়েছে ওরা,
বনপুকুরকে নিশ্চিহ্ন করবে আজ,
সূর্য তখন মাথার ওপর,
তেজ ঝলসে উঠেছে কঠিন দুটি চোখে;
সারা দেহে সেই তাপ মেখে কাস্তে হাতে  
ওদের সামনে দাঁড়িয়েছে বনপুকুরের অতি সাধারণ 
             সেই মেয়েটি
যে কাস্তে হাতে ধান কাটে।
   

1 Comments
  • avatar
    Anamika Saha

    29 April, 2025

    অসাধারণ হয়েছে লেখাটি ।মাটির গন্ধ মাখা আছে।

Leave a reply