শীতের সন্ধ্যা। কুয়াশার চাদরে ঢাকা শহর যেন এক রহস্যময় দুনিয়া। রূপা তার জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে। তার মন অস্থির। কারণ আজ তার জীবনে ঘটে গেছে এক অদ্ভুত ঘটনা।
সকালবেলা অফিসে যাওয়ার সময় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল রূপা। হঠাৎ খেয়াল করল, একজন লম্বা, কালো কোট পরা মানুষ তাকে দূর থেকে দেখছে। প্রথমে পাত্তা দেয়নি, কিন্তু লোকটি বাসে ওঠার সময়ও তার পেছনেই ছিল। অফিসে পৌঁছানোর পরও রূপা টের পেল, লোকটি তার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।
দিনশেষে যখন অফিস থেকে বের হলো, তখন সে লোকটিকে আর দেখতে পেল না। কিন্তু রূপার মনে অস্বস্তি কাটল না।
রাতের খাওয়ার পর রূপা তার ডায়েরি লিখতে বসে। সে সবসময় তার দিনলিপি লিখে। আজকের ঘটনাটা লিখতে গিয়ে মনে হলো, সে যেন কিছু ভুলে গেছে। তার মনে পড়ল, সকালে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক তার হাতে একটা চিঠি দিয়েছিলেন। কালো কোট পরা লোকটাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে চিঠিটা আর খুলে দেখার সময় হয়নি। ডায়েরি বন্ধ করে ব্যাগ থেকে চিঠিটা বের করল সে।
চিঠিটা খুলতেই রূপার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ভেতরে লেখা:
“তোমার জীবনে বিপদ আসছে। সাবধান থেকো। আর আমাকে বিশ্বাস করো। আমি তোমার বন্ধু। — ছায়া"
রূপা বুঝতে পারল না কীভাবে সে প্রতিক্রিয়া জানাবে। কে এই ছায়া? আর তার জীবনে বিপদই বা কেন আসবে?
*
পরদিন সকালে রূপা অফিসে যাওয়ার সময় আবার সেই কালো কোট পরা লোকটিকে দেখতে পেল। লোকটি তার দিকে তাকিয়ে হাসল, কিন্তু কিছু বলল না। রূপার গা শিউরে উঠল।
সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে সে লক্ষ্য করল, কেউ যেন তাকে অনুসরণ করছে। হঠাৎ করেই একটি গলির ভেতর থেকে একজন যুবক এসে বলল, “আপনি রূপা, তাই না?”
রূপা চমকে উঠল। “আপনি কে?”
“আমি ছায়া। চিঠিটা আমি লিখেছিলাম। আপনি বিপদে আছেন। আপনার আশেপাশে যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ আপনাকে ক্ষতি করতে চায়।”
রূপা হতভম্ব হয়ে গেল। “কী বলছেন আপনি? আমার কী ক্ষতি হবে?”
“আমি এখন সব বলতে পারব না। শুধু বলব, কালকের মধ্যেই আপনি সত্য জানতে পারবেন। আমাকে বিশ্বাস করুন।”
*
পরদিন সকালে রূপা অফিসে গিয়ে লক্ষ্য করল, তার ডেস্কে একটি অদ্ভুত নোট রাখা আছে। তাতে লেখা: “তোমার চারপাশে কেউ বিশ্বাসঘাতক। সাবধান থেকো। — ছায়া”
রূপা এবার বেশ ভয় পেতে শুরু করল। কিন্তু সে নোটটা কাউকে দেখাল না। দুপুরে তার কলিগ অরূপ তাকে কফি খেতে ডাকল। অরূপ বরাবরই রূপার প্রতি একটু বেশি আগ্রহ দেখায়।
কফি খেতে খেতে অরূপ বলল, “তোমার কী হয়েছে? তুমি খুব অস্থির লাগছ।”
রূপা কিছু বলতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই তার ফোনে একটি মেসেজ এল। মেসেজে লেখা: “অরূপের ওপর বিশ্বাস করো না। — ছায়া”
রূপা অরূপকে কিছু না বলে দ্রুত অফিসে ফিরে এল।
*
রাতে রূপা যখন বাড়ি ফিরল, তখন তার দরজার সামনে সেই কালো কোট পরা লোকটিকে আবার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। এবারে সে লোকটি বলল, “তোমার সত্য জানার সময় হয়েছে।”
রূপা ভেতরে নিয়ে গেল লোকটিকে। লোকটি বলল, “অরূপ তোমার অফিসের টাকা আত্মসাৎ করছে। তোমার নামে সব দোষ চাপানোর চেষ্টা করবে। আমি তোমাকে বাঁচাতে এসেছি।”
রূপা বিশ্বাস করতে পারল না। কিন্তু পরদিন অফিসে গিয়ে দেখল, সত্যিই তার নামে অভিযোগ উঠেছে। তখনই ছায়া এসে পুলিশের কাছে প্রমাণ জমা দিল। অরূপ ধরা পড়ল।
সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর রূপা ছায়াকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কে? কেন আমার জন্য এত কিছু করলে?”
ছায়া হাসল। “আমি তোমার মনের ছায়া। তোমার পাশে থাকার জন্য এসেছি।”
রূপার মনে কোথাও এক অদ্ভুত টান লাগল। এই রহস্যময় মানুষটির প্রতি তার মনে ভালোবাসার জন্ম হলো।
ছায়ার সাথে রূপার জীবন নতুন রূপ পেল। রহস্যের ছায়ার আড়ালেই জন্ম নিল গভীর প্রেম।
*****