কাশ্মীরে ধর্মের জিগির তুলে সন্ত্রাসবাদী রা ২৬জন হিন্দু পুরুষ কে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। একে নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর জন্য কোনও শব্দ, কোনও ভাষাই যথেষ্ট নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই জঙ্গিরা ইসলামিক মৌলবাদের অনুসারী এবং এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে ইসলামিক মৌল বাদের বিপদ আজকে পৃথিবীর অনেক দেশেই তার প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। সাথে সাথে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ জুড়ে যেভাবে একটা সম্প্রদায় বা আরও স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে মুসলমান সম্প্রদায়কে আক্রমণ করা হচ্ছে তাও প্রচণ্ড উদ্বেগজনক। সরাসরি মুসলমানদের সন্ত্রাসী বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ কাশ্মীরে আততায়ীরা ধর্মে মুসলমান একথা যেমন সত্য তেমনি ওই নৃশংস হত্যা কান্ডের পর যাঁরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, বিপদের ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকদের নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছিলেন তারাও মুসলমান। জীবনের পরোয়া না করে জঙ্গিদের হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে পর্যটকদের বাঁচাতে যিনি গিয়েছিলেন তিনিও মুসলমান। এ রাজ্যের নদিয়ার বাসিন্দা যে জওয়ানটি কাশ্মীরে জঙ্গি দের সঙ্গে লড়াইতে শহীদ হলেন তিনিও মুসলমান। কাজেই বিরোধটা হিন্দু মুসলমানের নয়, বিরোধটা সন্ত্রাসবাদের সাথে মানবতার। কাশ্মীরে ওই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছেন। ওখানকার মানুষ, ওখানকার অর্থনীতি পর্যটন নির্ভর। পর্যটক না গেলে ওখানকার মানুষের রুটি রুজি বিপন্ন। তাই ওখানকার মানুষ আবার পর্যটকদের আহ্বান করছেন, নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে চাইছেন যা ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে মানুষের রুটি রুজির প্রতি অগ্রাধিকারকেই প্রতিষ্ঠিত করে। এ দেশে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যা রয়েছে। জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দাম, বেরোজগারি, কর্মচ্যুতি, এছাড়াও নারী নির্যাতন, আদিবাসী বনবাসীদের সমস্যা, সি এ এ, এন আর সি, ওয়াকফ বিল ইত্যাদি, ইত্যাদি । এ সব কিছু হিন্দু মুসলমান খ্রিস্টান জৈন বৌদ্ধ নির্বিশেষে মানুষকে সমানভাবে প্রভাবিত করে, সেখানে কোনো বিভাজন থাকে না। এদেশের কৃষক জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ফসল ফলায়, এদেশের শ্রমিক জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সভ্যতা গড়ে তোলে, এদেশে রবীন্দ্রনাথ যেমন সত্য, তেমনই সত্য নজরুল। বহুত্ববাদের এক অবিস্মরণীয় ধারা রয়েছে আমাদের দেশে, দ্বন্দ্ব বিবাদকে পাশে সরিয়ে রেখে, পরাজিত করে এই মিলনের সুরই পরিণামে জয়ী হয়েছে। এই মিলনের সুরটাই ভারত বর্ষ, এর ভিত্তিটাই ধর্মনিরপেক্ষতা, এর বীজ বহুত্ববাদ। কাশ্মীরের ঘটনা এবং তার প্রতিক্রিয়া আঘাত করতে চাইছে সেক্যুলারিজমকে, অথচ এই সেক্যুলারিজম এর ধ্যানধারণা ভারতীয় সংবিধানে, যা এ দেশের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর মূল স্তম্ভ, অত্যন্ত দৃঢ় ভাবে স্থান পেয়েছে। অথচ দেশ-প্রেমের নামে, ধর্মীয় বিশুদ্ধতার নামে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চলছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সংবাদপত্রে, টি ভি চ্যানেলে, ফেসবুক ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমে এই প্রচার তুঙ্গে উঠেছে যার সামাজিক প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক এবং যা পুরোপুরি সংবিধান বিরোধী। এর বিরুদ্ধে সচেতন না হলে সভ্যতা আবার নতুন করে সংকটের মুখোমুখি হবে। কাজেই একদিকে যেমন উন্মত্ত সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে হবে সর্বাত্মকভাবে, তেমনই ভারতবর্ষের আবহমান কাল ধরে বয়ে চলা ধর্ম-নিরপেক্ষতা এবং বহুত্ববাদকে রক্ষা করার অঙ্গীকারও করতে হবে। মনে রাখতে হবে বহুত্ববাদ এবং ধর্ম-নিরপেক্ষতা দুর্বল হলে আখেরে সন্ত্রাসবাদেরই লাভ!
- সম্পাদকমন্ডলী
01 May, 2025
কাশ্মীরে বৈসারনে ইসলামিক ধর্মান্ধ সন্ত্রাসবাদী দের দ্বারা সংগঠিত হিন্দুধর্মপরিচয়ে গণহত্যার ঘটনা কে কেন্দ্রকরে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বিদ্বেষী সাথে প্রবল ধর্মবিদ্বেষী জিগীর তুলে আরও প্রাণহানির যে চিৎকৃত পটভূমি তৈরির অপচেষ্টা চলছে সম্পাদকীয় বক্তব্যে খুব সুন্দর অথচ বলিষ্ট ভাবে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বণিত হয়েছে। পুরোগামী সম্পাদকীয় কলমের প্রয়াস ধর্মবিদ্বেষী দের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সহায়ক হবে বলে আশা রাখি।