কুশীনগর - বুদ্ধের পরিনির্বাণস্থল

লিখেছেন:অঞ্জনা মজুমদার

 

 

কুশীনগরের প্রধান বৌদ্ধস্তূপ 

ছোটবেলায় ইতিহাস বইতে পড়েছি গৌতম বুদ্ধ আশি বছর বয়সে কুশীনগরে দেহত্যাগ করেন। তাই অল ইন্ডিয়া সায়েন্স টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের অ্যানুয়াল কনফারেন্স কুশীনগরে হবে শুনে যাবার সংকল্প নিয়েই নিলাম। 

কলকাতা স্টেশন থেকে পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেস সকালে যথাসময়ে গোরক্ষপুর স্টেশনে পৌঁছে গেল। সেখান থেকে উত্তর প্রদেশ পরিবহন নিগমের বাসে করে কুশীনগরে পৌঁছলাম। সেখানে ধর্মশালায় ডবল বেডের অ্যাটাচড্ বাথ গিজার সহ বুক করা ছিল। স্নান ও ব্রেকফাস্ট সেরে টোটো নিয়ে কুশীনগর ভ্রমণ শুরু করলাম।

ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদদের খনন করে পাওয়া অবশেষ থেকে জানা যায়, কুশীনগর বা কুশিনাগ্রাম বা কুশিনারায় ছিল মল্ল রাজ্যের রাজধানী। বুদ্ধ নিজেই একে চারটি পবিত্র স্থানের মধ্যে একটি বলে চিহ্নিত করেছেন।

এক বৈশাখী পূর্ণিমার দিন বুদ্ধ পরিনির্বাণ লাভ করার পর মল্ল রাজা যথাযথ সম্মানের সঙ্গে মুক্তিবন্ধনা চৈত্যের নিকটে তাঁর দেহাবশেষ দাহ করেন। এর প্রায় দুইশত বছর পর মৌর্য যুগে কুশিনারা আবারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে কুশিনারার খ্যাতি চরমে ওঠে গুপ্তযুগে। সে যুগে তৈরি অসংখ্য স্তূপ ও নানাবিধ ঐতিহাসিক গঠনকার্য তার সাক্ষ্য বহন করে। ৫ম, ৭ম ও ৮ম শতাব্দীর চৈনিক পর্যটকগণ যেমন ফা-হিয়েন, হিউয়েন-সাং ও ই-শিং তাদের স্মৃতিকথায় এই অঞ্চলের বিস্তৃত বিবরণ লিখে গেছেন।

অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষিত আছে কুশীনগরের সরকারি মিউজিয়ামে। এটি একটি দর্শনীয় স্থান। ভারতের সাথে ভিয়েতনাম, চীন, ভুটান, ও থাইল্যান্ডের মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি নানান সুন্দর বৌদ্ধ মন্দির বা মঠ গোটা কুশীনগর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। 

তবে প্রধান ও বিশাল স্তূপটি কালো রঙের, যেখানে বুদ্ধের পরিনির্বাণের পর দাহকাজ সম্পন্ন করা হয়েছিল। বড় পুরোনো বটবৃক্ষের তলায় সেই স্থান যেখানে চিতাভস্ম ভাগ করা হয়েছিল আট ভাগে। নীচের ছবিতে সেই আটটি স্থানের নির্দেশ আছে।

 

বুদ্ধের চিতাভস্মের দিক নির্দেশ

দেখলাম আঠারো হাতের বুদ্ধমূর্তি। প্রতিটি হাতেই তার বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র। একটি শায়িত বুদ্ধমূর্তিও আছে, পরিনির্বাণের সময়ের অনুরূপে। আর প্রতিটি সৌধই নানা মূর্তি ও স্থাপত্যে সজ্জিত। যেরকম আমরা যে কোনও বুদ্ধধর্মের পবিত্র স্থান যেমন থাইল্যান্ড, নেপাল, বা ভুটানে দেখেছি।

কুশীনগর ভ্রমণ বেশি সময়সাপেক্ষ নয়। বৌদ্ধ মন্দির বা মঠগুলি বেশ পরিচ্ছন্ন, নির্মল পরিবেশ। মন ভারি শান্ত হয়ে গেল। আমাদের ধর্মশালার পাশেই দেখলাম কুশীনগরের একমাত্র শিবমন্দির। এখানে দুইবেলা নিত্যপূজা হয়।

লুম্বিনীতে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান। আগেই সেটা দেখেছি। আর কুশীনগরে দেখলাম তার পরিনির্বাণের স্থান। একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।

আঠারো হাতের বুদ্ধমূর্তি 

***** 

 

ছবি - লেখিকা 

 


 

0 Comments
Leave a reply