পূর্বকথা
স্কুল জীবনে ইতিহাসের ক্লাসে সবচেয়ে প্রিয় ছিল ঈজিপ্ট বা মিশর সভ্যতা। তারপর ৪৩ বছর কেটে গেল। অবশেষে একদিন সকালে বাড়িতে চা খেতে খেতে আমার মনে হল মা বাবার বয়স হলেও এখনো তারা সক্ষম আর উৎসাহী, তাই কিছু একটা ভাবা যাক। আমাদের ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞেস করলে উনিও সবুজ সংকেত দিলেন। শুরু হল প্রস্তুতি। কিন্তু শুরুতেই গেরো। কোভিডের চক্করে ভুলে গেছিলাম মা বাবার পাসপোর্ট যথাযথ হলেও আমারটির রিনিউয়াল লাগবে। হাতে দেড় মাস সময় থাকলেও অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবে সেটি হাতে পেয়ে আমার ভিসার দরখাস্ত করা গেল যাবার মাত্র ৭দিন আগে। ভাবছিলাম গেল ভেস্তে, আমার ভিসা আসবেনা ঠিক সময়ে। তবে যাবার মাত্র ৩দিন আগে আকাঙ্খিত সেই ছাড়পত্র এসে গেলে, অবশেষে দোলের দিন মধ্যরাতে স্বপ্নের দেশের উড়ানে চড়লাম তিনজনে।
গিজা পিরামিড
১
প্রথম গন্তব্য ছিল কায়রো শহর --- পিরামিড আর স্ফিংক্স এর জন্যে। পৌঁছনোর পরের দিন সকালে ইব্রাহেম মোহামেদ (Ibrahem Mohamed) আমাদের সঙ্গে নিয়ে চললেন গিজা ভ্যালিতে। ৬ফুট ২ইঞ্চির ছেলেটির ইতিহাসের জ্ঞান অনেক গবেষক / অধ্যাপককে লজ্জা দেবে। অবশ্য ছেলেটি ইজিপ্টোলজিস্ট, তাই ওর কাছে এমনটাই প্রত্যাশিত।
গিজায় আছে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য গিজা পিরামিড। বয়স ৪৬৫০ বছর, নির্মাণ করেছিলেন ফারাও খুফু বা হোফু যাঁকে রোমানরা বলত চিওপ্স। ২০ বছর লেগেছিল সবচেয়ে বড়ো এই পিরামিডটি তৈরি করতে। সবচেয়ে নীচের পাথরগুলি ৮টন করে একেকটা আর ত্রিভুজের সবচেয়ে ওপরের ছোট পাথরগুলো ১.২৫ টন করে। ২.৩ মিলিয়ন পাথর খন্ড দিয়ে তৈরি ২৮৩ ধাপের গিজা পিরামিড আশ্চর্য এক নির্মাণ কারণ কোনো পাথরই আঠা জাতীয় কিছু দিয়ে জোড়া নয়। সম্পূর্ণ ব্যালেন্সের নিপুণতায় আজ প্রায় ৫০০০ বছর ধরে তা অটুট রয়েছে। ওই জায়গায় পাশেই বাকি দুটি পিরামিডের নাম যথাক্রমে খাফ্রা ও মেনকারা। তবে খুফু বা খোফুই সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিড।
পিরামিড চত্বরটি মূল কায়রো শহর থেকে অনেকটা ওপরে সাহারা মরুভূমিতে ১৩ একর জায়গা নিয়ে তৈরি, যাতে নীলনদের বন্যা তাকে প্লাবিত করতে না পারে। তবে প্রকৃতি না পারলেও মানুষ পেরেছে পিরামিডের ক্ষতি করতে। পিরামিড ৩টিই লাইমস্টোনের আস্তরণ দিয়ে ঢাকা ছিল। মাত্র একটিতে অর্থাৎ দ্বিতীয়টিতে শৃঙ্গের কাছে তার সামান্য খানিকটা অবশিষ্ট রয়েছে। বাকি দুটোয় কিছুই নেই ভেঙে নেবার কারণে। গিজার মূল পিরামিডের ভেতর ৩টে ঘর, সর্বোচ্চটি রাজার কারণ তিনি মূল দেবতা সূর্যের কাছাকাছি থাকবেন। তার নীচেরটি তাঁর প্রিয় রানীর জন্যে। তৃতীয়টি রাজার ব্যবহার করা জিনিসের। তবে বলাই বাহুল্য কিছুই নেই এখন।
তুলনামূলক সাহিত্য পড়ার সুবাদে ঈদিপাসের গল্পের স্ফিংক্স আর তার সেই আশ্চর্য ধাঁধার কথা জানতাম। কিন্তু পিরামিড পেরিয়ে খানিক দূর গিয়ে গিজায় যাকে দেখলাম, সে একদম অন্য অনুভূতি এনে দিল। বিশ্বাস করা শক্ত, কিন্তু ওই অতিকায় প্রাণীটির নির্মাণ হয়েছে ৫২ মিটার উচ্চতার একটি অখন্ড পাথর থেকে। স্ফিংক্স নামটি গ্রীক যার অর্থ পিরামিডের প্রহরী। মিশরীয় ভাষায় ওর নাম সেস এপ অ্যাঙ্ক অর্থাৎ সূর্যদেবতা রা-এর জীবন্ত মূর্তি। গ্রীক মিথের প্রাণীটি নারী হলেও সিংহদেহী মানব মুখের আদি মিশরীয় মূর্তিটি পুরুষের, যদিও তার দাড়ির অংশটি এখন আর নেই। লাইমস্টোন দিয়ে তৈরি দাড়ির অংশটি বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে আছে। আর নেই নাক, যেটি মিশরে আগত আরবরা ভেঙে দিয়েছিল। ভাঙা নাকের জন্যে কিনা জানিনা, তবে অতিকায় মূর্তিটির মুখটা আমার ভারী দু:খী লেগেছে। স্ফিংক্স এর একদম সামনে যেতে গেলে বিশেষ সরকারী অনুমতি লাগে, ফলে তাকে খানিক দূর থেকে দেখেই চোখ সার্থক করেছি। কিন্তু গিজা পিরামিডের অন্তত ৩টি তল বেয়ে উঠে ছবি তুলেছি,স্পর্শ করেছি মানুষের এই অত্যাশ্চর্য সৃষ্টি। মিশর ভ্রমণের রোমাঞ্চের শুরুও ওখান থেকেই।
স্ফিংক্সের সামনে
একই অঞ্চলে কাছাকাছি জায়গায় আছে সাকারা বা স্টেপ পিরামিড, যেটি পাথর নির্মিত প্রাচীনতম ত্রিভুজাকৃতি সৌধ। এর আগে সমস্ত সৌধ তৈরি হত কাদা মাটি দিয়ে। তাই ইব্রাহেমের (Ibrahem) মতে এটি গিজার পিরামিডের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন। মিশরের ৩য় রাজা দসুরের (Djosur) জন্য প্রথামাফিক মাটির ২৮ মিটার নীচে সমাধি তৈরি হয়েছিল, যা পরে বালি দিয়ে ঢেকে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনির্মাতা আয়েম হাতেপ ইঁটের মাপের পাথর দিয়ে তিনটে স্তরের একটা সৌধ নির্মাণ করেন যা আদৌ পিরামিড ছিল না। কিন্তু রাজা দসুর- এর ইচ্ছেয় তার ওপর আরো ৩টি ধাপ বসানো হয়। ফলে মাটির নীচ থেকে মোট উচ্চতা হয় ৬১মিটার। কিন্তু ভারী পাথরের ইঁট সাজিয়ে সাজিয়ে ৬টি ধাপ পরপর বসাবার প্রয়োজনে আয়েম হাতেপ প্রয়োগ করেন ইঞ্জিনিয়ারিং এর পদ্ধতি এবং ক্রমান্বয়ে যত ওপরে ধাপগুলো উঠেছে, তার আয়তন ছোট হয়ে এসেছে ব্যালেন্স রাখার জন্যে। এভাবেই তৈরি হয় প্রথম পিরামিড তথা "Step" পিরামিড। ১৮২১ সালে বালির আস্তরণের ভেতর থেকে এটি আবিষ্কার হলে দেখা যায় তার ভেতরে ১০০টি সমাধি রয়েছে, যার একটিতে আছে ৫০টি মমিকৃত বেড়াল, এবং একটি মমি সিংহও। এই সৌধটি উৎসর্গ করা হয়েছে দেবতা পাসতেথকে, যিনি উর্বরতার দেবতা, বেড়াল তাঁর বাহন, ঠিক যেমনটি দেখা যায় আমাদের ষষ্ঠীদেবীর ক্ষেত্রে। একটি সমাধিতে আবার ৪৫০০ বছরের পুরোনো মমিকৃত খাবারও পাওয়া গেছে। এই আয়েম হাতেপ আবার ছিলেন জ্যোতর্বিজ্ঞানীও। তাই এই পিরামিডটি মানমন্দির হিসেবেও ব্যবহৃত হত। তবে এই পিরামিড নির্মাণের পরে হঠাৎই একদিন হাতেপ হারিয়ে যান, তাঁর কোনো সমাধিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন গুণী মানুষটি ডাক্তারও ছিলেন। পরে মিশরীয় সংস্কৃতিতে তাঁকেই চিকিৎসার দেবতা হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
স্টেপ পিরামিড
সেদিনের শেষ গন্তব্য মেমফিস যা ছিল কায়রোর আগে প্রাচীন মিশরের পুরোনো রাজধানী। রাজা মেনেস এই জায়গাটির পত্তন করেছিলেন। প্রাচীন মিশরীয় রাজত্বকালে নীলনদের বদ্বীপের কাছে এই জায়গাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। মনে করা হত কারুশিল্পের দেবতা তাহ (Ptah) সুরক্ষা দিতেন শহরটিকে। তাঁর নামে একটি বিশাল মন্দিরও ছিল। ছিল আরও অনেক দেবমন্দির। কিন্তু প্রথমে আলেকজান্দ্রিয়া ও পরে কায়রোর উত্থানের জন্যে ধীরে ধীরে শহরটি পরিত্যক্ত হয় ও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। গিজা অঞ্চলের বর্তমান গ্রাম মিট-রাহিনাই অতীতের সেই মেমফিস। সেখানকার ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করা প্রত্নসামগ্রী দিয়ে একটি ওপেন এয়ার মিউজিয়াম তৈরি করা হয়েছে। তবে একটি মূর্তি রয়েছে সংলগ্ন বিল্ডিং এর ভেতরে। সেটি ঈজিপ্টের সেরা ফারাও রামেসিস ২ এর লাইমস্টোন দিয়ে তৈরি ১০ মিটার উচ্চ মূর্তির ৩/৪ অংশ। পায়ের দিকটি নেই বলে সেটি শায়িত অবস্থাতে রয়েছে। সেই অতিকায় আকৃতির পাশে দাঁড়ালে নিজেদের লিলিপুট মনে হতে পারে। রামেসিস ২ এর নাকি ৫০জন স্ত্রী ও ৯২টি সন্তান ছিল। মূর্তিটির পাশে বামনাকৃতি প্রহরী আবিসের আধভাঙা মূর্তি আছে, যিনি আনন্দের দেবতা।
বাইরের মূর্তিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছোট ও সম্পূর্ণ আকারের দাড়িওয়ালা স্ফিংক্স মূর্তি ও একটি পারিবারিক মূর্তি যাতে তিনজন রয়েছেন -- মাঝে কর্মীদের দেবতা বিতাহ (Bitah), ডানদিকে তাঁর স্ত্রী রোগ নিরাময়ের দেবী সেখমাত এবং বাঁদিকে তাঁদের পুত্র নেফারতোম।
রামেসিস ২
২
কায়রোতে দ্বিতীয় দিনের প্রথম গন্তব্য নিউ ঈজিপশিয়ান মিউজিয়াম, যেটি ২০০৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোবারকের স্ত্রী সুজানের বানানো, তবে সেটি বন্ধ হয়ে গেছিল। পরে ২০১৮ সালে আবার নতুন করে খোলা হয়। বলে রাখা ভাল কায়রোর রিং রোডে আরো একটি বিশাল মিউজিয়াম তৈরি হয়েছে, যেখানে ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে তুতেনখামেনের মমি সহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা মিশরীয় সভ্যতার নানা জিনিস ফেরত এসে গেছে। কিন্তু সেগুলোর রিস্টোরেশন চলছে। মিউজিয়াম উদ্বোধন হবে জুলাই মাসে। তাই একদম উল্টোদিকের হোটেলে আমরা তুতেনখামেনের প্রতিবেশী হয়ে থাকলেও সাক্ষাৎ হলনা, আক্ষেপ রইল।
কায়রো মিউজিয়ামের রক্ষিত কাবা থেকে আনা একটি ধর্মীয় প্রত্নবস্তু
যে মিউজিয়ামে গেছিলাম তার সেরা সম্পদ হল মাটির নীচে রয়্যাল মামি রুম, যেখানে রয়েছে ২২ জন ফারাও / রানীর মমিকৃত দেহ। ওখানে বিখ্যাত মমিগুলির মধ্যে আছে রামেসিস ২, রানী হাটসেপসুট, টটমোসেস ২, আমেনহোটেপের এর মমি। সত্যি বলতে নি:শব্দ ঠান্ডা প্রায়ান্ধকার বিশাল হলে শুধু গ্লো সাইন দেখে দেখে নির্দিষ্ট গলি দিয়ে গিয়ে মমিদের সামনে দাঁড়ালে শিহরণ হয়। অন্তত আমার তো ঘাড়ের কাছে বেশ একটা শিরশিরানি হচ্ছিল। সামনে শুয়ে ৫০০০ বছর আগেকার মানুষ, তার চুল, নখ, দাঁত সব অক্ষত। এমনকী চুল পাকা না কালো কোঁকড়ানো তাও দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগের পোশাক সাদা, কয়েকজনেরটার ওপর নানা চিহ্ন আঁকা। আধুনিক প্রযুক্তি অনুসারে ফারাও সিকেনেনরাহ এর আঘাতজনিত মৃত্যুর 3D ছবি রাখা আছে, যেখানে মাথায় কোথায় কীভাবে আঘাত লেগেছিল তা দেখা যাচ্ছে। মমিরুমে ছবি তোলা বা কথা বলা নিষিদ্ধ। কিন্তু মানুষজন বকবক তো করছেই, আবার মমি রাখা কাঁচের বাক্সের গায়ে ভর দিয়েও দাঁড়াচ্ছে। নির্বোধ টুরিস্ট বোধহয় সব জাতেই আছে।
ওপরতলার বিশাল বড়ো হলে রয়েছে ৫০০০ এর ওপর প্রত্নসামগ্রী, মিশরীয়, ইসলামীয় ও খ্রিস্টিয় মিলিয়ে। সোনার গয়না, কাবার রুপোলি কাজ করা বিশাল ঢাকনা, প্রাচীন বাইবেল, বাসন, নৌকো, মূর্তি... তালিকা বলে শেষ করা যাবে না। অন্তত: ঘন্টা দুয়েক সময় নিয়ে না গেলে মিউজিয়ামটি ভাল করে দেখা যায়না। আমি হাঁ করে দেখেছি আর ছবি তুলে গেছি। সঙ্গে ছিল ইব্রাহেমের (Ibrahem) মুখে মমি তৈরির সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি শোনা। মিশরে বিজ্ঞান কতটা উন্নত ছিল ৫০০০ বছর আগে ভাবতে অবাক লাগে।
প্রাচীন মিশরীয় নৌকা
মিশর নিয়ে কথা বললে পিরামিড আর মমিদের কথা বেশি হয়। কিন্তু কায়রো শহরেই Coptic অঞ্চলে ক্রিশ্চান ও মুসলিমদের বিখ্যাত দুটি সৌধ রয়েছে যাদের কথা অনেকেরই অজানা। ইব্রাহেমের ( Ibrahem) সৌজন্যে সে দুটি দেখা ও তাদের ইতিহাস জানা গেল। মসজিদটির নাম Mohammad Ali Mosque। ১১৭৬ সালে সালাদিন একটি দুর্গ তৈরি করেছিলেন। পরে ১৫১৭ সাল অবধি তা বন্ধ হয়েছিল। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে ১৮০৫ সালে মহম্মদ আলি ঈজিপ্টে আসেন তুর্কী সেনাবাহিনী সহ এবং রাজা হন। তাঁর আমলে প্রভূত উন্নতি হয় সে দেশের। ১৮৪২-এ তিনি এই মসজিদটি তৈরি করান যোসেফ বুশমাখ নামে এক তুর্কী ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে। এটি Alabaster Mosque নামেও পরিচিত। আলোর অসাধারণ বিন্যাস রয়েছে ভেতরে, রয়েছে প্রার্থনা করার বিশেষ জায়গা। পরে মহম্মদ আলিকেও এখানেই সমাধিস্থ করা হয়েছে, সেই সৌধও রয়েছে।
মহম্মদ আলি মসজিদ
মিশরের তৃতীয় ধর্ম খ্রিস্ট ধর্ম। তার অসাধারণ নিদর্শন হল Coptic অঞ্চলের Hanging Church। ৪র্থ সেঞ্চুরিতে এই চার্চটির নির্মাণ হয় একটি রোমান দুর্গের ওপরে। এটিকে হ্যাংগিং বলা হয় একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার জন্যে। বাইরে থেকে দেখে ঝুলন্ত বোঝা যায়না। কিন্তু লিফট বা সিঁড়ি দিয়ে একদম ওপরে উঠে প্রার্থনাঘরে ঢুকলে সেখানে মেঝেতে একটা জায়গায় কাঁচ বসানো দেখা যায়। সেটি দিয়ে নীচে তাকালে নীচের দুর্গের মাথাটি দেখা যায়, আর তার ওপরে শুধু কয়েকটি কাঠের খুঁটি তথা প্ল্যাংকের ওপরে গোটা গির্জাটি বসানো, অর্থাৎ সেটির কোনো বেস নেই। তাই এটি হ্যাংগিং।
হ্যাংগিং চার্চ
রাতে লাক্সর যাবার ট্রেন ধরলাম গিজা স্টেশন থেকে। সে বড়ো মারাত্মক অভিজ্ঞতা। ফার্স্ট ক্লাস কামরা, দুটি করে বাঙ্ক, বেসিন, সাবান, তোয়ালে, সব আছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ শূন্য ফলে বন্ধ সিট আপনা থেকে খুলে আসে। চাপা পড়লে আহত হবার সম্ভাবনা আছে। তবে রাতে আর সকালে খাবার দেয় সিল করা বাক্সে, সেটুকু যা সান্ত্বনা।
৩
লাক্সরে স্টেশন থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন বছর ৬০-এর মি: আলি যাঁকে দেখে হঠাৎ ভারতীয় মনে হতে পারে। তাঁর গল্প ও জ্ঞানভান্ডারও দারুণ। লাক্সরে যাবার প্রধান উৎসাহ ছিল ভ্যালি অফ কিংস্, অর্থাৎ ফারাওদের সমাধিস্থল দেখা। তাই এটিকে ডেথ ভ্যালিও বলা হয়। তবে পৌঁছে লাক্সরের ইস্ট ব্যাংকের উদেশ্যে রওনা হলাম সকাল ৮টায়। এটিকে ভ্যালি অফ লাইফও বলে। এই অঞ্চলে আছে ৭০০০ হাজার বছরের পুরোনো দুটি মন্দির : কারনাক মন্দির ও লাক্সার মন্দির। দুটিই সূর্যদেবতা আমুন রা-এর। এখানে আমুন রাকে ৩টি রূপে দেখা যাচ্ছে --- ভেড়ার রূপে, মাথায় পালক লাগানো মানুষের রূপে আর ঊর্বরতাকেন্দ্রিক লিঙ্গোত্থিত প্রতীকে। মন্দির দুটিরই নির্মাণ করেছিলেন ফারাও রামেসিস ২। মন্দিরদুটির আকার ও নির্মাণও প্রায় একই রকম। আগে সেটা নিয়েই কিছু কথা বলা যাক -
প্রথমে রয়েছে পাইলন অর্থাৎ প্রবেশপথের সামনের অংশ যেখানে রাজার বাণী বা রাজনৈতিক আদেশ খোদাই করা থাকত। এরপর কারনাক মন্দিরে উঠোনের দুপাশে আছে র্যাম্প যার দুধারে সারি দিয়ে রয়েছে আমুন রা-এর ভেড়ারূপী বিশাল বিশাল মূর্তি। সেই মূর্তির পায়ের কাছে রয়েছে রামেসিস ২ এর ছোট মূর্তি কারণ মনে করা হত তিনি আমুন রা-এর পুত্র। তারপর কারনাক মন্দিরে রয়েছে রাজা সেতির তৈরি আমুন রা, তাঁর স্ত্রী ও পুত্রের জন্যে উৎসর্গীকৃত তিনটি শ্রাইন। পরের অংশের নাম অবিনকোর (obinkor) বা সাধারণ প্রজাদের বসার জায়গা। এরপরে তাদের আর প্রবেশাধিকার নেই। অবিনকোর পেরিয়ে রয়েছে দেবতাকে পুজো দেবার অল্টার বা বেদী, যার দুপাশে রামেসিস ২ নির্মাণ করিয়েছিলেন দুটি বিশাল স্ট্যাচু, একটি জীবনের প্রতীক, আরেকটি বুকের ওপর দুটো হাত আড়াআড়ি রাখা মমির আদলে মৃত্যু প্রতীক। আর আছে রামেসিস ২-এর নিজের মূর্তি তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী নেফারতাইয়ের সঙ্গে। এই জায়গা দিয়ে যাবার অর্থ জীবন ও মৃত্যুর বলয়কে স্পর্শ করা।
এরপর রয়েছে ১৩৪টি পিলার বসানো প্রকান্ড কলামড্ হল। ১২টি পিলার ওপেন অর্থাৎ ওপরে ঢাকা নেই আর বাকি ক্লোসড্, মানে ওপরে ঢাকা। প্রতিটি পিলারের গায়ে রামেসিস ২-এর ছবি, তাঁর রাজত্বকাল, দেবতা আমুন রা, তাঁর স্বর্গীয় নৌকো, সূর্যবাহী হাঁসের ছবি আর কি অফ লাইফের প্রতীক নানা রঙে খোদাই করা। ৭০০০ বছর পরেও সেসব প্রায় অক্ষত আছে। রয়েছে হায়রোগ্লিফিকে লেখা নানান বাণীও। এরপর কারনাক মন্দিরে রয়েছে হাটসেপসুট ও তার বাবার তৈরি রোজ গ্রানাইটের দুটি ওবেলিক্স (obelisk) বা মিনার, যা আমুন রাকে উৎসর্গ করা। একদা এ-দুটি সোনা রুপো দিয়ে সজ্জিত ছিল। বলাই বাহুল্য তার সমস্তই লুঠ হয়ে গেছে। ওবেলিক্সকে মনে করা হয় স্বর্গের সিঁড়ি। এই জায়গাটি বরাদ্দ ছিল মন্ত্রী ও অমাত্যদের জন্যে।
কারনাক মন্দির
পরের অংশটি মন্দিরের কোর বা সংরক্ষিত এলাকা যেখানে শুধুমাত্র রাজা ও প্রধান পুরোহিতের প্রবেশাধিকার ছিল। সেখানে দেবতার বেদীর খানিক আগে দুটি পিলার রয়েছে --- পদ্ম আঁকা পিলারটি আপার ঈজিপ্টের চিহ্ন আরেকটি লোয়ার ঈজিপ্টের, অর্থাৎ রাজার অধীনস্থ সমগ্র রাজ্যের প্রতীক এই দুটি। বেদীটি অন্য অংশের চেয়ে উঁচুতে অবস্থিত। এই বেদীতে প্রধান পুরোহিত আমুন রাকে পুজো করতেন মোমবাতি জ্বালিয়ে, সুগন্ধী ছড়িয়ে ও মন্ত্র পড়ে। তবে তার আগে হোলি লেকে তিনি ও রাজা স্নান করে শুদ্ধ হয়ে আসতেন। লেকটি কারনাক মন্দিরে এখনো আছে, দীর্ঘ ৭০০০ বছরে একবারের জন্যও শুকিয়ে যায়নি মরুভূমির এই দেশে।
লাক্সর মন্দিরের কথাও একটু আলাদা করে বলা যাক। সেখানেও একটি বিশাল ওবেলিক্স আছে, যার পেছনে রামেসিস ২-এর ৬টি প্রকান্ড পাথরের মূর্তি আছে --- আর ওবেলিক্সের নীচে আছে ৪টি বাঁদরের মূর্তি। রাজার ৬টি মূর্তির মধ্যে একটির রূপ মমির মতো অর্থাৎ মৃত্যুর প্রতীক, একটির যোদ্ধা বেশ, ৩য় ও ৪র্থটিতে দুটি করে মুকুট হাতে নিয়ে যা আপার ও লোয়ার ঈজিপ্টের প্রতীক, আর শেষ দুটি মূর্তি জীবনের প্রতীক। এই মন্দিরে আবার আছে অ্যাভেনিউ অফ স্ফিংক্স যেখানে দুপাশে সার দিয়ে ৫৩টি করে মোট ১০৬টা স্ফিংক্স মূর্তি রাখা। এই লাক্সর মন্দিরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর ১৪টি পিলার বা কলাম যার মিশরীয় প্রাচীন আদল রোমানরা মিশর দখল করার পরে বদলে দিয়েছিল। আরো চমক লাগে যখন দেখা যায় মিশরে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তন হবার পরে আমুন রা এর নামে তৈরি ওই প্রাচীন লাক্সর মন্দিরে দেওয়ালে যীশুর লাস্ট সাপারের ছবি আঁকা। অবশ্য এখানেই চমকের শেষ নয়। খ্রিষ্টপুর্ব ৩৩০ এ আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট মিশরে এসে এই মন্দিরে নাকি আমুন রা-কে পুজো দিয়েছিলেন। মন্দিরগাত্রে সেই ছবিও খোদাই করা আছে।
লাক্সর মন্দির
কারনাক আর লাক্সর মন্দিরের যোগসূত্র ছিল একটি বাৎসরিক শোভাযাত্রা যা নাকি আমুন রা স্বয়ং নিজের নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে শুরু করেছিলেন। ফলে নববিবাহিত দম্পতিরাও কারনাক থেকে লাক্সর মন্দির অবধি শোভাযাত্রা করে আসত সুখী জীবন ও সন্তান কামনায়, তারপর এক বিশাল ভোজের মাধ্যমে শেষ হত সেই উৎসব।
রামেসিস ১-এর টম্ব, ভ্যালি অফ কিংস্
লাক্সরে যাবার প্রধান আগ্রহ ছিল ভ্যালি অফ কিংস্, তা তো আগেই বলেছি। নীলনদ পেরিয়ে ওয়েস্ট ব্যাংকে গিয়ে প্রবেশ করলাম সেই ধূ ধূ মরুভূমির মধ্যে যেখানে ১.২ মাইল জুড়ে রয়েছে ১৮তম থেকে ২০তম রাজত্বের ফারাওদের ৬৩টি টম্ব, যেগুলি তৈরি হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩৯ থেকে ১০৭৫এর মধ্যে। প্রথম সমাধিটি রাজা থুথমোস ১ এর, সর্বশেষটি রেমেসিস ১০-এর। আছে বিখ্যাত কিশোর রাজা তুতেনখামেনের সমাধিক্ষেত্র। বলা বাহুল্য সমাধিগৃহগুলো এখন খালি কারণ মমিগুলি নিয়ে যাওয়া হয়েছে মিউজিয়ামে আর সোনাদানা যা কিছু ছিল তা বহু লুঠ হয়ে গেছে। কিন্তু রয়ে গেছে পাথরের সমাধিগুলি আর প্রতিটি গুহার অসাধারণ দেওয়াল চিত্র। সব কটি আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব হয়নি কারণ প্রবল গাত্রদাহী রোদে খুব বেশিক্ষণ হাঁটা যায়না আর গর্ভগৃহগুলি এত গভীরে যে একবার করে নীচে নামার পর দম ফুরিয়ে যায়। যে ৩টি টম্ব দেখলাম, প্রতিটিতে দরজা আটকানোর জন্য দড়ির বাঁধন রয়েছে, যা আজো অক্ষত। প্রতি টম্বের সামনে সেটি যে রাজার, তাঁর ছবি খোদাই করা আছে বাজপাখির মাথা ওয়ালা গড অফ জাজমেন্টের দেবতা হোরাসের সামনে, তাদের ফাইনাল জাজমেন্টের জন্যে। হোরাসের ছাড়পত্র পেলে তবেই স্বর্গের রাস্তা খুলবে। খোদাই রয়েছে বুক অফ ডেড অর্থাৎ রাজাদের পাপপুণ্য বিচারের জন্যে হোরাসের খাতাও।
যে ৩টি টম্ব দেখেছি তার মধ্যে রামেসিস ৪ এর টায় দেওয়ালে সাপের ছবি আঁকা, রামেসিস ৯এর টায় সেই বৈতরণী তথা নৌকোর ছবি ও লিঙ্গোত্থিত মূর্তির ছবি আঁকা, আর রামেসিস ১এর টায় আঁকা সেই ফাইনাল জাজমেন্টের ছবি। আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছিল রামেসিস ১ এর সমাধিগৃহটি তার অতুলনীয় দেওয়ালচিত্রের জন্যে। তবে র্যাম্প বেয়ে, তারপর ৫০টির মতো পাথুরে সিঁড়ি ভেঙে একবার ওঠা নামা করেই নিশ্বাস নিতে বসে পড়তে হল।
হাটসেপসুটের মন্দির
লাক্সরের এই মন্দিরটি হাটসেপসুটের নামে। রাজবংশের সদস্য এই হাটসেপসুটকে ইব্রাহেম (Ibrahem) বলেছিল রাজা আর মি: আলি বললেন "She was a king" । গল্প শুনে জানা গেল যে সৎভাইকে ঠকিয়ে সিংহাসনে বসার ইচ্ছেয় হাটসেপসুট প্রচার করান - সূর্য দেবতা আমুন রা তার মাকে বিয়ে করেন ও সে দেবতার পুত্র হিসেবে জন্মেছে। ফলে তারই ফারাও হবার অধিকার আছে। এই কথা প্রতিষ্ঠা করতে তিনি তার রাজত্বকালে সর্বত্র নিজের দাড়িওয়ালা দেওয়ালচিত্র আঁকান। মায়ের গর্ভাবস্থার ছবি, নিজের জন্মের ছবি, "বাবা" আমুন রা-এর সঙ্গে নিজের ছবিও আঁকান এই মন্দিরে --- এছাড়া নিজে নকল দাড়ি আর পুরুষের পোষাক পরে রাজত্ব চালান মোট ২২ বছর। রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডার উৎকৃষ্ট (নাকি নিকৃষ্ট) এই নিদর্শন চমকে দেয়। গোয়েবেলস্ কোথায় লাগে? আরো চমক লাগে যখন জানা যায় সৎ ভাই অবশেষে রাজ্য দখল করে হাটসেপসুটকে হত্যা করে ও এই মন্দিরের সব ছবি থেকে তার চেহারা মুছে দেয়। কিন্তু ইতিহাস তাকে ভোলেনি --- এই এমপাওয়ারড্ সি-কিং-এর মন্দিরে তাই আজো টুরিস্টদের ভীড় হয়।
সেদিনের শেষ গন্তব্য কলোসি অফ মেমনন (Colossi of Memnon)। এই জায়গার বিশাল সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন মেমনন তথা অমনোফিস দেসুর। গ্রীকরা নাকি মেমননের সঙ্গে তাদের দেশের ট্রয় যুদ্ধের বীর অ্যাগামেমননকে সমীকৃত করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২৭ সালে এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প ও নীলনদের প্রবল বন্যায় জায়গাটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এখন রয়েছে ব্যাসাল্ট পাথরে তৈরি দুটি মাত্র স্ট্যাচু, যার একেকটির উচ্চতা ২০মিটার করে এবং ৭০০ টনের একটি করে অখন্ড পাথর থেকে তৈরি সে দুটি।
কলোসি অফ মেমনন
৪
সকালবেলা লাক্সর থেকে ডোমেস্টিক ফ্লাইটে আবার কায়রো এলাম। কায়রো এয়ারপোর্ট ম্যানেজমেন্ট কীরকম ভয়ানক আবার বুঝলাম। টিকিটে লেখা থাকলেও মা বাবার হুইলচেয়ার পেতে আধ ঘন্টা সময় লাগল। যাও বা এল, দুটোই ভাঙা। যাইহোক কোনোমতে বেরিয়ে প্রথমদিনের সেই পছন্দের হোটেলে একই ঘরে আবার চেক ইন করা গেল।
সারা ট্রিপে আলু, চিজ, ক্রিম, চিকেন খেয়ে খেয়ে ওজন বেড়েছে। আরেকটু বাড়াতে শেষ সন্ধ্যায় গেলাম নীলনদের ক্রুজ ডিনারে। তার আগে ৬০০ বছরের পুরোনো বিখ্যাত খান-এ-খালিলি বাজারেও একবার ঢুঁ মারলাম, যেখানে গোটা তিনেক নিউমার্কেট কী গড়িয়াহাট মার্কেট ঢুকে যেতে পারে। আলপিন থেকে এলিফ্যান্ট সব নাকি পাওয়া যায় ২৪ ঘন্টা খোলা এই বাজারে। আমাদের হাতে আধ ঘন্টা সময় ছিল, তাই একটার বেশি গলিতে ঢুকতে পারিনি, তবে ওটুকুতেই নানা স্মারক দেখে খানিকটা হলেও মন ভরল। কেনা হল প্যাপিরাস ও অ্যালাব্যাস্টারের বাটি আর আনুবিস, ওবেলিক্স, পিরামিড, স্ফিংক্সের স্মারক এবং উপহার সামগ্রী।
খান এল খালিলি বাজার
তারপর নীলনদে ভাসতে ভাসতে সূর্যাস্তের লাল আলোয় ভাত সহযোগে নৈশভোজ খেয়ে, আরবী গান শুনে, ম্যাজিক আর স্থানীয় নাচ দেখে শেষ হল আমাদের মিশর সফর।
পরদিন সকালে কায়রো থেকে দেশে ফেরার প্লেন। দেড় মাস আগে পাসপোর্ট বিভ্রাট দিয়ে শুরু হয়েছিল ঈজিপ্ট সফর। সফরের ৭দিন নির্বিঘ্নে কাটল দেখে ভাবছিলাম যাক আর কিছু হবেনা। কিন্তু ফেরার দিন অল্পসময়ের জন্যে আবু ধাবি এয়ারপোর্টে নেমে মোবাইল চার্জে বসিয়ে বেমালুম ভুলে কলকাতাগামী প্লেনে চড়ে বসেছিলাম। কি ভাগ্য যে প্লেন ছাড়ার আগে মনে পড়েছিল। এদিকে আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে আমি প্লেন থেকে নেমে ওটা আনতে গেলে আর উঠতে পারবনা। অর্থাৎ মা বাবা চলে যাবেন কলকাতা। আমায় পরের কোনো প্লেনে ফিরতে হবে। কিন্তু ওখানকার দুজন ভারতীয় গ্রাউন্ড স্টাফ মুশকিল আসান হয়ে এসে আমায় বিশেষ অনুমতি জোগাড় করে দিলেন প্লেন থেকে নেমে মোবাইল নিয়ে আসার। মোবাইল বিভ্রাট সমাধানের পরে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে অবশেষে সিটবেল্ট বাঁধলাম, কারণ এতেই যে সাতদিন ধরে সব নোটস নিয়েছিলাম আর ছবি তুলেছিলাম। সেদিনই মাঝরাতে বাড়ি ফিরে এলাম ঈজিপ্ট ভ্রমণের এই শেষ রোমাঞ্চ সহ।
ও হ্যাঁ এই লেখাটা কিন্তু সেই হারিয়ে যেতে যেতে ফিরে পাওয়া মোবাইলেই লেখা।
*****
(মিশরের ছবি - ডঃ চন্দ্রমল্লী সেনগুপ্ত)