অরণ্যে ঋতুবৈচিত্র্যঃ ভালোবাসা যেখানে প্রেম হয়ে যায়!

লিখেছেন:জয়ন্ত কুমার মল্লিক

 

No photo description available.

ঐতিহ্যময়  বনবাংলো

‘জঙ্গলের মধ্যে ঘর ঈশ্বর গড়েন’ 

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ঃ “প্রচ্ছন্ন স্বদেশ" (১৯৮২) 

ডুয়ার্সে ঐতিহ্যমন্ডিত খুঁটিমারির দোতলা বাংলোর ঘর জীবনানন্দের উত্তরসূরি এক প্রকৃতিপ্রেমিক কবির দখলে ছিল দু’রাতের জন্যে। প্রবাদপ্রতিম কবিসত্ত্বার বনের প্রতি সেই ভালোবাসার টান থেকেই এই অসামান্য কবিতাটির সৃষ্টি হয়। ‘প্রকৃতি পর্যটন’ নিয়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায় ওরফে স্ফুলিঙ্গ সমাদ্দারের এরকম আত্মনিবেদন যেন আমার মতো অকবির বিগত ৫০ বছরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা এক স্বর্গীয় উপলব্ধির আক্ষরিক বহিঃপ্রকাশ, হয়তোবা আপনাদের মতো প্রকৃতিপ্রেমিকদেরও - কারণ বহুকাল ধরেই ধূসর শহুরে নাগরিকরা স্বাস্থ্যহানিকর দূষিত পরিমন্ডলের যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ও প্রশান্তির খোঁজে প্রকৃতির কোলে, দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তথা বন্যপ্রাণবন্ত আবাসে গিয়ে কয়েকটা দিন সবুজের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে চান। ছমছমে আলো-আঁধারি, সুউচ্চ সবুজ অরণ্য তার ঋতুবৈচিত্র্যের নান্দনিক সম্ভার নিয়ে সারা বছর জুড়েই আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। বনের অন্দরমহলে ব্রিটিশ আমলের কাঠের তৈরি ডাকবাংলোর অলৌকিক পরিবেশ, ফায়ার প্লেস, চৌকিদার, দীর্ঘ ইতিহাস- সব মিলিয়ে এক অপূর্ব নষ্টালজিয়া! এক লহমায় ভারাক্রান্ত মনকেও যা চনমনে করে দেয়। বাংলোয় ইলেক্ট্রিসিটি নেই। সোলার সিস্টেমে জ্বালানো হয় আলো। কোলাহল বা হাঁকডাক নেই। দিনেরাতে আশ্চর্য ধ্যানী মৌনতায় ডুবে থাকে সবসময়!!! সেই অপার্থিব পরিবেশে কদিন থাকতে পেরে ধন্য হয় অতিথিরাও!!!

No photo description available. 

গাঢ় সবুজ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কী সুন্দর কুলকুল করে পাহাড়ি ঝর্ণার সাঙ্গীতিক আলাপন চলে সবসময়। যখন পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে অযত্নে বেড়ে ওঠা পুটুস বা ল্যান্টেনার ঘন ঝোপে গোলাপি ও আগুনরঙা ফুলের ছত্রমঞ্জরী ফুটে থাকে, তার তুলনা মেলা ভার। কান পাতলে নিস্তব্ধ জঙ্গলে হঠাৎই সম্বর হরিণের সতর্কবার্তা শুনতে পাবেন। ঘন ঝোপের আড়াল থেকে ডেকে ওঠে একবার, দু’বার, তিনবার - ‘কঁক, কঁক, কঁক’। অ্যালার্ম কল বা বিপদ সংকেত। হরিণটা হয়তো বা কাছেই শিকার খুঁজতে আসা শার্দুলের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। তারপর কাকর হরিণটাও জঙ্গলের কোন গহীন থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এসে কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে ডাক পেড়ে সবাইকে সতর্ক করে পালিয়ে যায় জঙ্গলের গহীনে। আসলে খানিকটা দূরে নজরমিনারের নিচে নুনমাটিতে হয়ত ততক্ষণে তৃণভোজীদের সমাবেশ ঘটেছে, আর আড়াল থেকে তাদের ওপর নজরদারি করছে সুযোগসন্ধানী মাংশাসীরা। 

নুনের খোঁজে গন্ডার 

এই স্থানে তৃণভোজী পশুরা প্রয়োজনীয় সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো খনিজ পদার্থযুক্ত নুনমাটি চাটতে আসে। বনের মধ্যে কোনো কোনো জায়গাতে বনবিভাগের কর্মীরা কৃত্রিম পদ্ধতিতে বস্তা বস্তা নুন আর গুড়ের সাথে মাটি মিশিয়ে গর্ত ভর্তি করে ঢিবির মতো (সল্ট স্ল্যাব) তৈরি করে় দেন৷ যেমন জলদাপাড়ায় ঢুকে সামনে কয়েক কিলোমিটার গেলেই দেখা যাবে। পাশ দিয়ে কুলুকুলু বয়ে চলেছে হলং নদী। নদীর ওপারে রয়েছে ওখানকার আবাসিকদের প্রিয় নুনি। গরুমারা বনবাংলো-চত্বরের শেষপ্রান্তে রাইনো পয়েন্ট। সামনেই ইংডং নদীর ওপারেও রয়েছে এই নুনের ঢিপি। চাপড়ামারি মিনারের পাশে আছে এক ছোট্ট জলা, সঙ্গে 'নুনি'। বন বাংলোর ওপরের বারান্দা থেকেই জন্তুদের জল খেতে বা নুন চাটতে দেখা যায়।
সব বন্যপ্রাণীরই শরীরে নুনের দরকার। তাই এখানেই নুন চাটতে আসে হাতি, গাউর, সম্বর, চিতল, কোটরা হরিণ (বার্কিং-ডিয়ার), শজারু, বুনো শুয়োর, ময়ূর, বানর, আর আসে গেড়া, এক-শিঙের বড় ভারতীয় গণ্ডার। কেউ কেউ আসে দিনের বেলা আর অন্যরা রাতের অন্ধকারে। বিশাল দেহের হাতি পাগলের মতো নুন মাটি খোঁজ করে বিশেষ করে মিলন ঋতুতে; নোনতা মাটির জন্যে হন্যে হয়ে বনে ঘুরে বেড়ায়। এমনকি হিমালয়ের উড়ন্ত কাঠবিড়ালিকেও নুনমাটি চাটতে দেখা গেছে। আর এদের পেছনে পেছনে আসে মাংশাসীরা শিকারের আশায়। সাধারণত বর্ষায় সল্টলিকগুলো ধুয়ে যায়৷ তারপর আবার নতুন করে এগুলো বানাতে হয়।

নুনের সন্ধানে ব্যস্ত হাতি

মন চাইলে বাংলোর ব্যালকনিতে কাঠের চেয়ারে গা এলিয়ে বসে থাকা যায় গভীর রাত অবধি - তারা ঝলমল নীল আকাশের তলায়, তাকিয়ে থাকা যায় ধ্রুবতারার দিকে নিষ্পলক, অনুভব করা যায় অরণ্যের লাবণ্যের স্পর্শ- 

“সবুজ ছায়া ঘেরা লাবণ্যে নিবিড় অরণ্য,/ সবুজে সবুজে ঢাকা অরণ্যের বুকের বরণ্য।/ অরণ্যের স্বপ্ন চোখে-/ অরুণোদয়ের পথে-/ লাবণ্য ডানা মেলে আকাশ নীলে।/ অরণ্য সাজে সবুজ স্বপ্নের চাদরে,/ শীতের সকালের শিশির ভেজা আদরে।/ ঘন কুয়াশায় ঘেরা অরণ্য নদীর কুল,/ বুকের গহীনে সবুজ সমুদ্র দেয় দোল।"

- রুবিনা মজুমদার  (০৯-০৪-২০২৫)

No photo description available.

আমাদের এই সুন্দরী বনভূমি বৈচিত্র্যময়, তাই তো “তোমায় নতুন করে পাব বলে” বারে বারে ছুটে যাই তোমার কাছে, আর প্রত্যেক বার তোমাকে নতুন করে আবিষ্কার করি। আমাদের মতো মানুষদের হৃদয়ে তার আসন চিরস্থায়ী। হাজারো বার তার নিবিড় সান্নিধ্য উপভোগ করেছি পাহাড় থেকে সাগরে, সারা উপমহাদেশেই ছড়িয়ে রয়েছে আমার এই রকম হাজারো প্রেমিকা। তবুও এই বৃদ্ধ বয়সেও তার ক্ষণিক দর্শনে, স্পর্শে, অনুভবে, এমনকি ঘ্রাণেও পুলক জাগে! জীবনানন্দের মতো মনে হয়-

“তবু তোমাকে ভালোবেসে
মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে
বুঝেছি অকূলে জেগে রয়
ঘড়ির সময়ে আর মহাকালে যেখানেই রাখি এ হৃদয়।” 

দীর্ঘ সময় শুষ্ক আবহাওয়ার পর বৃষ্টি নামার পরমুহুর্তে সৃষ্ট ভেজা মাটি ও নির্মল বাতাসের সুঘ্রাণ (Petrichor) আমাদের স্নায়ুতে ভালো লাগার এই অনুভূতি তৈরী করে। বিজ্ঞান বলে এ হলো অণুজীবের কেরামতি! গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী, 'পেত্রোস' ও 'ইকোর' থেকে উদ্ভূত হয়েছে পেট্রিকো শব্দটি। পেত্রোস অর্থ 'পাথর' আর ইকোর অর্থ 'ঈশ্বরের শিরায় প্রবাহিত তরল’। ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ আসলে মাটিতে মিশে থাকা বিশেষ একধরণের ব্যাকটেরিয়ার তৈরী করা অণু গন্ধ। জিওসমিন নামের ঐ অণু স্ট্রেপটোমাইস দিয়ে তৈরী হয়, যা সাধারণত উর্বর মাটিতেই উপস্থিত থাকে। বৃষ্টির জলের ফোঁটা মাটি স্পর্শ করলে মাটিতে উপস্থিত জিওসমিন বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃষ্টির পর সেই গন্ধ অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। গাছে উপস্থিত যেসব রাসায়নিক সুগন্ধ সৃষ্টি করে সেগুলো সাধারণত পাতার মধ্যে তৈরী হয় এবং বৃষ্টির কারণে যখন গাছের পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সেইসব রাসায়নিক পাতা থেকে নিঃসৃত হয়ে আশেপাশের বায়ুতে গিয়ে মেশে। যার ফলে বৃষ্টি পরবর্তী সুঘ্রাণও সহজেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। 

ঋতু আবর্তন প্রেম-জাগানিয়া; ফুল-ফোটানো প্রভৃতি অন্য সবকিছুই তার আনুষঙ্গিক। সহজ-সরল জীবনে গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত কেটে যায় ঝিরি-ফুল-পাতা-মেঘে। বর্ষাকালে জঙ্গল অপরূপ ঘন সবুজে সেজে ওঠে, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে শুষ্ক হতশ্রী প্রকৃতি বর্ষায় তার হৃত যৌবন ফিরে পায়। বৃষ্টির ফোঁটা কখনো টুপটাপ করে পড়ে; আবার কখনও ঝমঝমে বারিধারায় উদোম ভেজে বনভূমি, উর্বর হয় শুষ্ক মাটি। গাছের রুক্ষ ডালে জন্ম নেয় কচি কিশলয়। অনেক সময় টানা বৃষ্টিতে ভেসে যায় জঙ্গল ও তার আবাসিকরা। খাদ্য ও বাসস্থানের সমস্যা দেখা দেয়। তবুও বন্যজগতে বর্ষা মানে রোমান্স। ভালোবাসা এখানে প্রেম হয়ে যায়! তাই খুঁটিমারির আকুতি নিয়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায় একটা ব্যতিক্রমী ছন্দোময় শব্দবন্ধ রচনা করেন - ‘বৃষ্টিতে ডুয়ার্স খুবই পর্যটনময়’। 

No photo description available.

এই সময়টা বন্য জীবজন্তুদের প্রজনন ঋতু বলেও গণ্য করা হয়। যখন তূরীয় উচ্ছাসে ময়ূর ‘কেঁয়া কেঁয়া’ করে ডেকে ওঠে, সম্বরের দল ‘ঘাক ঘাক’ করে বা ব্যাঙ ‘ঘ্যাঙর্ ঘ্যাঙ্’ ডেকে চলে। এই সময় পর্যটকদের জন্যে জঙ্গলের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে বন্যপুরুষেরা নির্বিঘ্নে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বীজ তার এক বা বহু স্ত্রীর গর্ভে বপন করতে পারে। বর্ষাকালে বনের ভেতরে রাস্তাঘাটও চলাচলের উপযুক্ত থাকে না। মোটামুটি ভাবে ১৬ই জুন থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনমাস উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ জঙ্গল – যেমন মহানন্দা, গরুমারা, জলদাপাড়া, চাপড়ামারি, নেওড়া উপত্যকা, চিলাপাতা, বা বক্সা - ইত্যাদি বিভিন্ন জনপ্রিয় বনাঞ্চল - পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে।

অরণ্যে ঘোরাঘুরির পক্ষে গ্রীষ্ম বা বর্ষা কোনোটাই খুব একটা অনুকূল নয়। অরণ্যে এই দুই ঋতুর একটা ভয়াবহ ও আদিম রূপ আছে। প্রতি গ্রীষ্মেই ঘনঘন আগুন লাগে কোনো না কোনো বনে। ঘন বনাঞ্চলে দাবানল হবার ঘটনা তুলনামূলক বেশি। উষ্ণ তাপ-শিখা ক্রমশ ওপরের দিকে উঠতে থাকে আর পোড়াতে থাকে মাইলের পর মাইল জুড়ে বনাঞ্চল। উঁচু গাছের ক্যানোপির আগুন অনায়াসে উড়তে থাকে যত্রতত্র। এসব আগুন নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। 

কাকর হরিণ (বার্কিং ডিয়ার) 

আবার জঙ্গলে যদি কোনওভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে বন্যপশুরা উদভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে শুরু করে। শিকার করতে সুবিধা হয় চোরাশিকারিদের। জঙ্গলে যাঁরা গরু চরাতে যান, আগুন লাগলে সুবিধা তাঁদেরও। আগুনে ঝরা পাতা পুড়ে গেলে, জঙ্গলের ভেতরে ফাঁকা জমিতে নতুন ঘাস জন্মায়। গবাদি পশুদের খাবারের কোনও অভাব হয় না। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন আবহাওয়ার তাপমাত্রা বেশ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং পরিবেশকেও শুষ্ক করে তুলেছে। যে কারণে আগুন দ্রুত ছড়ায়, দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলে এবং আগুনের তীব্রতা বাড়ে। গরম আবহাওয়া গাছপালা থেকে আর্দ্রতা হ্রাস করে তাকে শুষ্ক জ্বালানিতে পরিণত করে যা আগুন ছড়াতে সাহায্য করে। এতে বনভূমির সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বন্য আবাসিকরাও, বিশেষ করে ছোটো ও ক্ষুদ্র প্রাণীরা। দাবানল ধ্বংস ডেকে আনে এবং গাছপালা পুনর্জন্মের ভারসাম্যকে বিপর্যস্ত করে। বস্তুত, এটা একটা বনের বাস্তুতন্ত্রকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। এমনকি অভিযোজিত উদ্ভিদ প্রজাতির পক্ষেও এই ধরনের চরম পরিস্থিতিতে টিকে থাকা খুব কঠিন। স্মরণ করা যেতে পারে, পৃথিবীর ফুসফুস বলে খ্যাত আমাজন অরণ্যে দীর্ঘকাল ধরে এক ভয়াবহ দাবানল সংঘটিত হয়। এ অগ্নিকাণ্ড কোনো নিছক দুর্ঘটনা ছিল না, এটি ছিল ইচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগ (Arson); মূল্যবান কাঠ, জ্বালানি আর স্বর্ণ আহরণের জন্য একশ্রেণির অতি মুনাফালোভী মানুষের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। কিছুদিন আগেই অযোধ্যা বা শুশুনিয়া পাহাড়েও এই একই রকম দাবানলে অরণ্য ছারখার হয়ে গেল। জেনে বুঝে আমরা যদি ধৃতরাষ্ট্র-গান্ধারী হয়ে থাকি তাহলে আগামীতে চরম ধাক্কাটা সামলানো সম্ভব হবে না হয়তো।

No photo description available.

জঙ্গলে দাবানল 

তীব্র শীত ও শুষ্ক ঋতুতে বনভূমি হালকা হতে থাকে। শীতে জঙ্গলের নিজস্ব গন্ধ আর বড় বড় গাছের পাতা ঘিরে থাকা আবছায়ার সঙ্গে হালকা কুয়াশা মাখামাখি হয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে দমকা হাওয়া শীতের কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়। পর্যটকরা বেশির ভাগ এই শীতকালেই অরণ্য ভ্রমণে আসেন। হাতির পিঠে চেপে বা জিপে করে জঙ্গল সাফারিতে যান। ভোরের জঙ্গল সাফারিটা খুব মনোরম। জন্তুজানোয়ার দেখার সুযোগও বেশি। বেলা বাড়লে জঙ্গলের গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে শীতের মিঠে রোদ গায়ে পড়ে চকচক করে। তবে শীতের আর একটা দিক হলো তার নগ্নতা। রবি ঠাকুরের ভাষায়-

“কুঞ্জে কুঞ্জে মৃত্যুর বিপ্লব করিছে বিকীর্ণ শীর্ণ পর্ণ রাশি রাশি শুন্য নগ্ন করি শাখা, নিঃশেষে বিনাশি অকালপুষ্পের দুঃসাহস।”

No photo description available. 

শীতের অন্তর্ধানে ‘শূন্যতার শুভ্র পত্রে আঁকা হয় পূর্ণতার ছবি’। ‘আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী’। একটু ওমের পরশ পেতেই গাছের ডালে ডালে উঁকি দেয় নতুন পাতা, নতুন কুঁড়ি; নতুন চারার জন্ম হয়। শিমুল, পলাশ, অশোক, পারিজাত, দেবকাঞ্চন, কনকচাঁপা, মাধবীলতা, আকআড়কাঁটা, হিমঝুরি, ইউক্যালিপটাস, রক্তকাঞ্চন, কুরচি, কুসুম, গাব, গামারি, গ্লিরিসিডিয়া, ঘোড়ানিম, জংলীবাদাম, জ্যাকারান্ডা, দেবদারু, নাগেশ্বর, পলকজুঁই, পাখিফুল, পালাম, বুদ্ধনারিকেল, মণিমালা, মহুয়া, মাদার, মুচকুন্দ, রুদ্রপলাশ, শাল, স্বর্ণশিমূল, ক্যামেলিয়া, পানিয়া মাদার, পাটকেল মাদার ইত্যাদি ফুল ফোটে।  মৌমাছি বা ভ্রমররা পরাগায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই সময়েও অনেক পশুপাখির মিলন ঘটে এবং বাচ্চাদের জন্ম হয়। 

No photo description available.

পিন্দারে পলাশের বন পালাবো পালাবো মন - সুনীল মাহাতো

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ষড়ঋতুর এই দেশে এখন ছ’টি ঋতু আর আলাদা করে বোঝা যায় না। চারটি ঋতু খুবই স্পষ্ট। হেমন্ত আর শরৎ তো উজ্জ্বল হিমেল উৎসব ঋতু হিসেবেই আদৃত। তবে এরই মধ্যে বর্ষাকাল বিভিন্ন প্রাণীর প্রজনন ঋতু হিসেবে পরিচিত, সে কথা তো আগেই বলেছি। কারণ এই সময়টাতে অনুকূল জলবায়ু এবং খাদ্যশস্যের প্রাচুর্য থাকে যা তাদের প্রজনন প্রক্রিয়ার জন্যে সহায়ক। যেমন গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে বৃষ্টি শুরু হলে ব্যাঙেরা লম্ফঝম্প শুরু করে "ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ" ডাক দিয়ে প্রিয়ার খোঁজ করতে থাকে, আর সঙ্গিনী পেয়ে গেলে তার সাথে মিলিত হয়। বস্তুত  বর্ষার সময় ব্যাঙেরা ডিম পাড়ার অনুকূল পরিবেশ পায় অর্থাৎ এই সময়ে বাতাসে ডিম ফোটার জন্য প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা থাকে। 

No photo description available.

প্রজনন ঋতুতে ব্যাঙ 

পক্ষী জগতে অনেকের মতোই কমলা দামার প্রজননকাল এপ্রিল থেকে জুন। এরা মেটে দোয়েল, কমলা বউ, কমলাফুলি বা কমলা দোয়েল নামেও পরিচিত। বসন্তে দারুণ রূপে অন্যরকম মাদকতা নিয়ে হাজির হয় এরা। গায়ের কমলা আর ধূসর রং লালচে-ধূসর ঝরা পাতার ভেতরে এদের শত্রুদের চোখ এড়িয়ে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে।  পুরুষ পাখির মাথার চাঁদি, ঘাড় ও বুকের রং গাঢ় কমলা। তাতে আছে হালকা হলুদের ছোঁয়া ও লালচে আভা। পেট ও লেজের নিচটা সাদা। পিঠ ও লেজের ওপরটা নীলচে-ধূসর। ডানার প্রান্তে রয়েছে কয়েকটা সাদা দাগ। স্ত্রীটি দেখতে পুরুষটিরই মতো, তবে বুকের রং একটু ফিকে এবং পিঠ ও লেজ ছাইরঙা। এরা বেশ লাজুক। লোকচক্ষুর অন্তরালে ঝোপ-জঙ্গল, বন-বাগান বা বাঁশঝাড়ের স্যাঁতসেঁতে নির্জন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। প্রজননের সময় জুটি বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। 

কমলা দামা  

পাখিদের শরীরে রয়েছে জেড ও ডব্লিউ ক্রোমোজোম, যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর এক্স এবং ওয়াই ক্রোমোজোমের মতোই কাজ করে। পুরুষ পাখি দু’টি জেড এবং স্ত্রী পাখি একটি জেড ও একটি ডব্লিউ ক্রোমোজোম ধারণ করে। পাখির ডিম শুধু সাদা হয় না, এলাকা ভেদে এবং জলবায়ুর ফারাকে ডিমের রঙও বদলে যায়। ডিমের খোলায় ক্যালসিয়াম কার্বোনেট কোষ থাকে। রঙিন ডিম মানেই তাতে রঞ্জক পদার্থ থাকবে। বাইরের এবং ভেতরের পর্দা (মেমব্রেন) পেরোলে অ্যালবুমিনের আস্তরণ। তার ভেতরে কুসুম (Gelatinous Egg White) থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রোটিনের এই স্তর আগে তৈরি হয়, তারপর তাতে রঞ্জকের রঙ ধরে। ডিমের রঙ কী হবে সেটা স্থির হয়ে যায় জরায়ুতেই। যে স্থানে পাখি ডিম পাড়ছে সেখানকার আবহাওয়া, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, বাসার গঠন, শত্রুর আক্রমণের সম্ভাবনা সবকিছু বিচার করে সঙ্কেত পাঠায় পাখির মস্তিষ্ক। সেই সঙ্কেতের ভিত্তিতেই জরায়ুতে ডিমের গঠন সম্পূর্ণ হয়। কখনও তার প্রোটিন বেষ্টনী মজবুত ও পিচ্ছিল হয়, কখনও ডিমের খোলসে রুক্ষ ভাব আসে আবার কখনও খোলার রঙে বৈচিত্র্য আসে।

স্তন্যপায়ী প্রাণীরা মায়ের দুধের উপরে নির্ভর করে শৈশব অতিবাহিত করে, মাতৃজঠরে তাদের শরীর এমনভাবে গঠিত হয়, যেন তারা জন্মের পরপরই মায়ের স্তন থেকে দুধ পান করতে পারে। কিন্তু পাখির স্তন বা বুকের দুধ নেই। তাই পাখির দুধ স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো নয়, বরং তাদের থেকে ভিন্ন। অনেক বীজভোজী পাখির ছানা যেমন, অল্প বয়সী ঘুঘুর বাচ্চাদের তাদের বাবা-মারা পোকামাকড়ও তেমন খাওয়ায় না; পরিবর্তে, প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্যগুণযুক্ত এই তরল বা দুধ সরবরাহ করে। এই নিঃসরণগুলি "পিজিয়ন বা কবুতরের দুধ" নামে সর্বাধিক পরিচিত যা এরা বাচ্চাদের খাওয়ায় বা বলা চলে উগড়ে দেয়। ফসলের এই দুধ পাখির খাদ্যথলিতে উৎপন্ন হয়। এই খাদ্যথলিতে দু’টি অংশ বা লোব থাকে। পিটুইটারী গ্রন্থির প্রোল্যাকটিন (Prolactin) হরমোনের প্রভাবে এই দুধ উৎপন্ন হয়। ডিমে তা দিতে বসার কয়েক দিন পর থেকে এই দুধ উৎপাদনের প্রস্তুতি শুরু হয়। এটি হলো পৌষ্টিক স্তরের কোষের মধ্যে চর্বির গুটিকা (globules of fat) যা পিতা মাতা উভয়ের খাদ্য থলিতে যথেষ্ট পরিমাণে মজু্ত হয়। এটা দুধের মতই গুণসম্পন্ন ও বাচ্চাদের জন্যে একপ্রকার আদর্শ খাবার। স্তন্যপায়ীর দুধের সাথে এই দুধের সামান্য সাদৃশ্য আছে। কবুতরের দুধ একটি আধা শক্ত পদার্থ যা কিছুটা ফ্যাকাশে হলুদ পনিরের মতো। এই দুধ গরু বা মানুষের দুধের চেয়ে বেশি প্রোটিন এবং চর্বি ধারণ করে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে এতে প্রোটিন আছে প্রায় ৬০%, চর্বি ৩২ - ৩৬%, কার্বোহাইড্রেট বা শালি জাতীয় পদার্থ ১ - ৩%; এছাড়াও খনিজ পদার্থ যেমন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, সোডিয়াম এবং ফসফোরাস আছে এই দুধে। আছে বিজারণ ও রোগ প্রতিরোধক শক্তি। IgA অ্যান্টিবডিরও সন্ধান পাওয়া গেছে এই দুধে। 

কবুতর, ঘুঘু ও ফ্লেমিঙ্গো এইসব প্রজাতির পাখির পিতামাতারা জন্মের পর সপ্তাহ খানেক ধরে বাচ্চাকে মুখ থেকে এই বিশেষ নিঃসরণ খাওয়ায়। এক্ষেত্রে সুবিধা হল যে উভয় লিঙ্গই এটি উৎপাদন করে। ঘুঘুর জিভ লম্বা ও সরু। এদের মুখ গহ্বরের নীচের অংশ বেশ প্রশস্ত হয় যা বাচ্চাকে খাওয়ানোর উপযোগী। মাতা বা পিতা কবুতর বাচ্চার মুখের মধ্যে মুখ প্রবেশ করিয়ে খাবার সরাসরি তার অন্ননালীতে পৌঁছে দেয়। সাধারণতঃ ঘুঘুর দু’টো বাচ্চা হয় বলে এই দুধ দু’টি বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট। এই দুধ খেয়ে বাচ্চারা উল্লেখযোগ্য দ্রুত হারে বেড়ে ওঠে।

No photo description available.

ঘুঘু 

আপনারা অনেকেই হয়তো বনে পুরুষ ময়ূরকে পেখম মেলে নাচতে দেখেছেন। আসলে এটা ওদের পাকাদেখা অনুষ্ঠান বা যৌন নির্বাচন, যা কিনা প্রাকৃতিক নির্বাচনের এক রূপ; যেখানে ময়ূরী পুরুষের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ তার পেখমের বাহার দেখে তাকে মিলনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ করে। ময়ূরের পেখমের দৈর্ঘ্য ১৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গড়ে একটা প্রাপ্তবয়স্ক ময়ূরের সম্পূর্ণ পেখমে মোট ২০০টারও বেশি পালক থাকে। পেখমের পালকগুলো সবুজ এবং সোনালী, যার নীল ও ব্রোঞ্জ রঙের দাগগুলোকে নয়নের মতো দেখায়। আবার শরীরের পালকগুলো অধিকাংশই ধাতব নীলচে সবুজ। ময়ূর কিন্তু তার এই সুন্দর পেখম নিয়ে জন্মায় না। বস্তুত ৩ বছর বয়স পর্যন্ত একটি পুরুষ ময়ূরের দেহে তার চারিত্রিক লেজটিই থাকে না। এমনকি অনেক দিন পর্যন্ত এদের স্ত্রী ও পুরুষ হিসেবে আলাদাভাবে পার্থক্যও করা যায় না, ময়ূর এবং ময়ূরী দেখতে একদম একই রকমের হয়ে থাকে। ছোট ময়ূরগুলোর প্রায় আট মাস বয়স থেকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পেখম বৃদ্ধি পেতে শুরু করে কিন্তু চার বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত এরা সম্পূর্ণ পেখম  ("train") অর্জন করে না। ময়ূর প্রতি বছর তাদের প্রজননের পর পেখম বদলায়। সে সময় পাখাগুলো এদের দেহ থেকে ঝরে পড়ে। 

No photo description available. 

ময়ূরের নাচ 

বর্ষাকাল মূলত ময়ুরের প্রজনন কাল। প্রজননকালে ময়ূর পেখম মেলে ও ধীরে ধীরে ঘুরে ঘুরে ময়ূরীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। ময়ূরের পেখম তার যৌন নির্বাচনের ইঙ্গিতবাহী, যেখানে ময়ূরী সেইসব ময়ূরকে খুঁজে বেড়ায় যাদের পালকের বেশ বাহার থাকে। এ ব্যাপারে ময়ূরী খুবই খুঁতখুঁতে এবং পুরুষের চমৎকার প্রদর্শনের প্রতি তার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। তাই পূর্বরাগের সময় ময়ূর প্রথমে তার লম্বা পেখম সামনের দিকে বাঁকা করে পাখার মতো ছড়ায়। আর এরপর সে তার নজরকাড়া নাচ নাচতে শুরু করে। সে যখন তার শরীর ঝাঁকায় তখন রঙিন বর্ণের পালকগুলো তার শরীরের দু’পাশে ঝুলে থাকে ও সাথে একটা আওয়াজও শোনা যায়। সে জোরে জোরে ‘কাও কাও’ চিৎকার করে। খুব একটা সুরেলা না হলেও এই ডাক ময়ূরীর প্রতি তার মিলন আগ্রহের সংকেত হিসেবে ধরা যেতে পারে। তবে ময়ূরীরা সবসময় ময়ূরের নাচ দেখেই আকৃষ্ট হয় না। মাঝে মাঝে ময়ূরী অতি ক্ষীণভাবে ময়ূরের উদ্ভট আচরণ অনুকরণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু অনেক সময়ই তাকে উদাসীন বলে মনে হয়। তা সত্ত্বেও বলা হয়, যে ময়ূর পেখম তুলে যত সুন্দর নাচ প্রদর্শন করতে পারবে মিলনের জন্য সে ততই ময়ূরীর প্রতি আকর্ষিত হবে। ময়ূরের যদি যৌন খামতি থাকে তবে ময়ূরী অধিক উত্তম ও মানানসই সঙ্গীর খোঁজ চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে কম গুণসম্পন্ন ময়ূরেরা তাদের বংশ বাড়াতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে এবং অধিক গুণসম্পন্ন ময়ূরেরা বেশি বংশবিস্তারের মাধ্যমে আনুপাতিক হারে বংশ বাড়াতে থাকে।

বাস্তুসংস্থানিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বাংলার বনভূমিকে পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে: ক্রান্তীয় আর্দ্র চিরহরিৎ, ক্রান্তীয় আধা-চিরহরিৎ, ক্রান্তীয় আর্দ্র পর্ণমোচী, জোয়ারধৌত সুন্দরবন ও আবাদি বন। বিস্তীর্ণ তৃণক্ষেত্র, নলবন বা জলাভূমি গন্ডার-হাতির আদর্শ আবাস। ঘাসবন কোথাও কোথাও হাতির চেয়েও উঁচু। জল কাদায় স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ। আবার প্রতিবছর বর্ষার সময় জেগে ওঠা নদীর চর ঘাসে ভরে ওঠে, যেন তৃণশয্যা। অনুকূল পরিবেশ, তাই সেই চরে হাজির হয় তৃণভোজী মহাকাল বা অন্যান্য স্থুলচর্ম জন্তুরা, পরিযায়ী জলচর পাখির মেলা বসে। 

চিরহরিৎ (evergreen) হলো এমন একটি উদ্ভিদ যার পাতা প্রত্যেক ঋতুতেই সবুজ থাকে। পাতা ঝরালেও একসাথে সব ঝরিয়ে ফেলে না। এর বিপরীত হচ্ছে পর্ণমোচী (deciduous), যার অর্থ “পরিপক্ক অবস্থায় ঝরে যাওয়া” অথবা “ঝরে যাওয়ার ঝোঁক”, মূলত এদের পাতা শীতকালে বা শুষ্ক ঋতুতে ঝরে যায়। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। অন্যসব উদ্ভিদ হল প্রায়-চিরহরিৎ যারা শীতঋতুতে অথবা শুষ্ক মৌসুমে কিছু পাতা ধরে রেখে পরবর্তী বৃদ্ধি মৌসুম আসার আগেই সেই পাতা ঝরিয়ে দেয়। ওকের কয়েকটি প্রজাতিসহ, কিছু বৃক্ষের শুষ্ক পাতা শীতকাল জুড়ে থেকে যায়। এসব অটল শুষ্ক পাতাকে মার্সেসেন্ট পাতা বলে এবং নতুন বৃদ্ধি শুরুর সাথে সাথে বসন্ত কালে এরা ঝরে পড়ে। চিরহরিৎ বনে কিছু আধাচিরহরিৎ ও পত্রমোচী বৃক্ষও থাকে, কিন্তু তাতে বনের চিরসবুজ প্রকৃতি বদলায় না। চিরহরিৎ বন অপেক্ষা আধাচিরহরিৎ বনের গাছতলায় (undergrowth) উদ্ভিদ বেশি জন্মায়। আধাপর্ণমোচী বনে শালের প্রাধান্য থাকায় সাধারণত এই অরণ্যভূমি শালবন নামেই পরিচিত। শাল (Shorea robusta) শালবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৃক্ষ-প্রজাতি হলেও এখানে আরও অন্তত ৫০০ বিভিন্ন প্রজাতির ছোটবড়, লতাগুল্ম ইত্যাদি গাছগাছড়া জন্মাতে দেখা যায়। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পলাশ, সিধা জারুল, বহেড়া, হরীতকী, শীলকরই, শিমুল, কুসুম, পিতরাজ, আমলকি, কাঞ্চনলতা, কুমারলতা, শতমূলী, মৌআলু, ঝুম আলু, ভাঁট, আসামলতা, ছনঘাস, শালপানি, বনহলদি ইত্যাদি। উদ্ভিদবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধিশালী হলেও শালবন নানা কারণে এখন অবক্ষয়ের সম্মুখীন। সেগুন (Tectona grandis)-এর আদি ক্ষেত্র বার্মা (মায়ানমার)। পাহাড়ে বিশেষ করে পাথুরে এলাকাগুলোতে একমাত্র পানীয় জলের উৎস ছড়া, ঝিরি ও ঝর্ণা। সেখানে মনোকালচার পদ্ধতিতে সেগুন চাষ ও প্রচুর জল শোষণ করার ফলে জলের স্তর একের পর এক নিচে নামতে থাকে। সেগুন গাছের ছায়া যেখানটায় পড়ে সেখানটায় আর অন্য কোনো বৃক্ষ জন্মাতে বা বেড়ে উঠতে পারে না। সেগুনের জালের মতো বা ছোট ছোট শিকড় থাকে না। এ কারণে সেগুন মাটি ক্ষয় করে আশঙ্কাজনকভাবে। সেগুন গাছ কাঠের জন্য উপযোগী হলেও পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

পর্ণমোচী বৃক্ষ সাধারণত শীত বা শুষ্ক ঋতুর অভিযোজন হিসেবে অধিকাংশ গাছের পাতা ঝরিয়ে থাকে (Abscission)। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় (transpiration) উদ্ভিদদেহ থেকে জল হারাবার মাত্রা কমানোই এ বৈশিষ্ট্যের কারণ। পর্ণমোচী বনের গাছপালা কমবেশি ১০-২০ মিটার উচ্চ আচ্ছাদন (canopy) তৈরি করে। প্রায় ২০০টির মত বিভিন্ন প্রজাতির ছোট গাছপালাও পর্ণমোচী বন থেকে শনাক্ত করা হয়েছে। যেসব উদ্ভিদ এসবের মাঝামাঝি, তাদেরকে প্রায়-পর্ণমোচী বলা হয়; নতুন বৃদ্ধি শুরুর সাথে সাথে এরা পাতা ঝরিয়ে দেয়। আমাদের রাজ্যে দুই ধরণের স্বতন্ত্র পর্ণমোচী বন পাওয়া যায়ঃ শীতপ্রধান পর্ণমোচী বন এবং ক্রান্তীয় ও প্রায়-ক্রান্তীয় পর্ণমোচী বন। বহুসংখ্যক পর্ণমোচী উদ্ভিদ পাতাবিহীন অবস্থায় ফুল ফোটায় যেহেতু তাতে পরাগায়নের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। পাতার অনুপস্থিতি বায়ু-পরাগি উদ্ভিদে বায়ুর প্রবাহ উন্নত করে এবং কীট-পরাগি উদ্ভিদে কীটের কাছে ফুলের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করে। এই কৌশলের ঝুঁকিও আছে, যেমন হিম ফুলের ক্ষতি করতে পারে অথবা শুষ্ক মৌসুমের অঞ্চলে উদ্ভিদের জল-পীড়ন বৃদ্ধি পেতে পারে। তথাপি, পাতাবিহীন অবস্থায় স্বচ্ছ বরফ ঝড় বৃক্ষশাখা ও কান্ডের অনেক কম ভাঙন ধরায়। এছাড়াও ঠান্ডা শীতের দিনে তরল জলের প্রাপ্যতা কমে যাবার কারণে উদ্ভিদ জলের অপচয় হ্রাস করতে পারে। যদি চিরহরিতের সাথে তুলনা করি, তাহলে দেখব পর্ণমোচী উদ্ভিদের সুবিধা-অসুবিধা দুইই রয়েছে। জল সংরক্ষণের জন্য অথবা শীতের আবহাওয়ায় বেঁচে থাকার জন্য পর্ণমোচী উদ্ভিদকে পাতা ঝরিয়ে ফেলতে হয়, এবং পরবর্তী বৃদ্ধি মৌসুমে অবশ্যই তাদেরকে নতুন পাতা ছাড়তে হয়। এজন্য তাদেরকে যেসব সম্পদ ব্যবহার করতে হয়, চিরহরিতের ক্ষেত্রে সেসবের দরকার পড়ে না। অন্যদিকে শীতকালে পাতা ঝরানোর ফলে উদ্ভিদ কীটপতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা পায়। ক্ষতিগ্রস্ত পাতাগুলি মেরামত এবং কার্যক্ষম রাখার চাইতে কেবলমাত্র তাকে হারানো এবং নতুন পাতা গজানো অধিক শ্রেয়। পাতা ঝরানোর ফলে ফাঁকা জায়গা (ক্যাভিটি) কমে যায় যা উদ্ভিদের জাইলেম ভেসেলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এই ঘটনা পর্ণমোচী উদ্ভিদে বৃহৎ ব্যাসার্ধের জাইলেম ভেসেলের সৃষ্টি করে যা গ্রীষ্মের বৃদ্ধি কালে প্রস্বেদনের হার বাড়িয়ে দেয়।

পাতাঝরার সাথে জটিল শারীরবৃত্তীয় সংকেত এবং উদ্ভিদের ভেতরের পরিবর্তন জড়িত রয়েছে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া পাতায় ক্লোরোফিলের যোগান ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। উদ্ভিদ সাধারণত গ্রীষ্মে পুনরায় এসব ক্লোরোফিল পূর্ণ করে নেয়। শরৎকালে যখন দিন ছোটো হয়ে আসে অথবা উদ্ভিদ যখন খরা-পীড়িত, পর্ণমোচী উদ্ভিদ ক্লোরোফিল কণা উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এর ফলে অন্যান্য রঞ্জক কণা স্পষ্ট হয় এবং অসবুজ রঙের পাতা দেখা যায়।  দিন যখন ছোটো হয়ে আসে এবং রাত্রি ঠান্ডা হলেও হিমাঙ্কের ওপরে বিরাজ করে, পাতার রঙ তখন সব চাইতে উজ্জ্বল হয়। পাতার অন্যান্য রঞ্জক পদার্থের মধ্যে রয়েছে ক্যারটিনয়েড যা হলুদ, বাদামি, আর কমলা রঙের। এ্যানথোসায়ানিন রঞ্জক পদার্থ লাল এবং রক্তবর্ণের সৃষ্টি করে, যদিও তারা সবসময় পাতাতে উপস্থিত থাকে না। বরং এ্যাবসিশন প্রক্রিয়া শুরুর পর যখন শর্করা পাতার মধ্যে আটকে থাকে, গ্রীষ্মের শেষের দিকে এমন সময়ে এরা পত্ররাজীতে উৎপাদিত হয়।

পত্রবৃন্ত ও শাখার মধ্যবর্তী স্থানে যখন একটি অ্যাবসিশন স্তরের সৃষ্টি হয় তখনই পাতা ঝরা আরম্ভ হয়। পাতার নতুন বৃদ্ধির সময়ে বসন্তকালে এই স্তরের সৃষ্টি হয়। একের সাথে অন্যের পার্থক্য করতে পারে এমন কোষের স্তরের দ্বারা এটি গঠিত। পাতা এবং উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ থেকে উৎপাদিত অক্সিন নামক উদ্ভিদ-হরমোনের প্রতি এসব কোষ সংবেদনশীল হয়। পাতা থেকে অক্সিনের উৎপাদনের হার যখন উদ্ভিদের দেহের উৎপাদনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, এ্যাবসিশন স্তরের কোষগুলো তখন পরষ্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। শরতে, অথবা পীড়নের সময়, পাতায় অক্সিনের উৎপাদন কমে যায় অথবা বন্ধ হয়ে যায় যা এ্যাবসিশন স্তরের কোষগুলোকে সম্প্রসারিত করে দেয়। কোষের এই সম্প্রসারণ কোষের বিভিন্ন স্তরের মধ্যেকার সংযোগ ভেঙে দেয় যার ফলে উদ্ভিদ থেকে পাতা আলাদা হয়ে পড়ে। এসময় ভাঙনের অংশে একটি স্তরের সৃষ্টি হয় যা উদ্ভিদকে রসহানি থেকে রক্ষা করে। বেশ কিছু সংখ্যক উদ্ভিদ পাতা ঝরানোর আগে তা থেকে নাইট্রোজেন এবং কার্বন অপসারণ করে এবং প্রোটিন আকারে মূল ও অভ্যন্তরীন বাকলের প্যারেনকাইমা কোষের ভ্যাকুয়লে জমা রাখে। বসন্তকালে নতুন পাতা বা ফুল বৃদ্ধির সময় এসব প্রোটিন নাইট্রোজেনের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

 No photo description available.

গাছের দেহ জুড়ে পরগাছা 

বিভিন্ন বৃক্ষ বিভিন্ন সময়ে তাদের পাতা ঝরায় যার ফলে বনকে মোটামুটি সবসময় সবুজই দেখায়। অধিকাংশ ক্রান্তীয় বৃষ্টিবনের বৃক্ষরা চিরহরিৎ বলে পরিচিত যারা পাতার বয়স বাড়া এবং ঝরার সাথে সাথে সারা বছর ধরে নতুন পাতা প্রতিস্থাপন করে। অন্যদিকে ঋতুগতভাবে শুষ্ক জলবায়ুর প্রজাতিগুলো হয় চিরহরিৎ অথবা পর্ণমোচী। উষ্ণ শীতপ্রধান জলবায়ুর অধিকাংশ উদ্ভিদ প্রজাতিও চিরহরিৎ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। যেহেতু, খুব অল্প সংখ্যক চিরহরিৎ চওড়াপাতা উদ্ভিদই ৩০° সেন্টিগ্রেডের নিচের তীব্র ঠান্ডা সহ্য করতে পারে, সেহেতু ঠান্ডা শীতপ্রধান জলবায়ুতে মোচাকৃতির উদ্ভিদের আধিক্য, এরা মূলত চিরহরিৎ। যেসব অঞ্চলে পর্ণমোচী জন্মানোর কারণ থাকে (যেমন, ঠান্ডা বা শুষ্ক ঋতু), চিরহরিৎ হওয়াটা সেখানে মূলত অল্প পুষ্টি স্তরের ক্ষেত্রে একটি অভিযোজন। পর্ণমোচী বৃক্ষ পাতা ঝরানোর সাথে সাথে পুষ্টি হারাতে থাকে।

সুস্বাস্থ্যের রহস্য: বন থেরাপী বা বন-স্নান 

C:\Users\JAYANTA\Desktop\48430037_2111320825601892_1628246295464378368_n.jpg

বন-স্নান (forest bathing) প্রকৃতির সঙ্গে পুনঃসংযোগের একটি উপায় হিসেবে চর্চিত হয়ে আসছে। সুখ খুঁজে পেতে পাঁচ ইন্দ্রিয়ের ব্যবহারে প্রকৃতির সঙ্গে নীরবে সংযোগ স্থাপন করা যায়। যে উপলব্ধি রবীন্দ্রনাথ আগেই করে বলেছিলেন, ‘এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে, এসো করো স্নান নবধারাজলে’॥ 'আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে'। জাপানে বন-স্নান ‘শিনরিন ইয়োকু’ বলে পরিচিত। মানুষের স্বাস্থ্যে বনের প্রভাব খুঁজতে গিয়ে আন্তঃশাস্ত্রীয় বিজ্ঞানচর্চার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এক চিকিৎসা জ্ঞানের নাম হয়েছে ‘বন ওষুধ’। বনস্নান করাকে তুলনা করা হয়েছে প্রতিষেধক ওষুধের সঙ্গে। এই প্রক্রিয়া মানুষের ইন্দ্রিয়জাত দর্শন, শ্রবণ, স্বাদ, গন্ধ ও স্পর্শের মাধ্যমে প্রকৃতির সঙ্গে গভীর সংযোগ স্থাপনের এক প্রয়াস। আপনি গাছের পাশে বসতে পারেন অথবা বনের মধ্যে হাঁটতে পারেন। বনের সবুজাভ পরিবেশে চোখ মেলে দেখতে হবে, শুনতে হবে পাতার শব্দ, পাখির ডাক। ফাইটোনসাইড হচ্ছে উদ্ভিদ ও গাছপালা নিঃসৃত সুবাস। ফাইটোনসাইড নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে তা ইমিউন সিস্টেমের কাজের সত্যিকার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে, তারই সাথে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আর সেটা সম্ভব হয় ফাইটোনসাইড এর মত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল জৈব যৌগ শ্বাসের সাথে গ্রহণ করার ফলে। গাছ এটি নিঃসৃত করে প্রাথমিকভাবে পোকামাকড় ও ক্ষতিকর জীবাণু থেকে নিজেদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য। বুক ভরে শ্বাস নিতে হবে, যেন এই প্রথম কোনো সুন্দর, সবুজ ও সতেজ পরিবেশে এলেন আপনি। গভীরভাবে শ্বাস নেয়ার ফলে বনের বিভিন্ন উদ্ভিদের গন্ধ পাওয়া যায়। সব ইন্দ্রিয় উজ্জীবিত হয়। এটি প্রাকৃতিক অ্যারোমাথেরাপির কাজ করে। মাটির গন্ধও উপকারী। এটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট হিসেবে কাজ করে।

পারস্পরিকতা, পরিবেশ ও নিজের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অনুশীলনটি আরেকটি চাবিকাঠি। আপনি একটি বৃক্ষের সাহচর্য উপভোগ করতে পারেন, একটি প্রবাহে খেলা করতে পারেন অথবা একটি প্রাণীকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যদিও এটি যোগব্যায়ামের মতো প্রাচীন কোনো অনুশীলন নয়, তবে বিভিন্ন অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য এটিকে নিরাময়ক হিসেবে দেখা হয়। মনঃসংযোগের সঙ্গে বন-স্নানের অনেক মিল রয়েছে। এটি মন ও আত্মাকে শান্ত করে। বন-স্নানে পঞ্চেন্দ্রিয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হয়। দেহের ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়া অপসারিত হয়ে স্বাস্থ্যকর অনুভূতির সৃষ্টি করে। ধ্যান মগ্ন পরিবেশে আধ্যাত্মিক শক্তির বিকাশ ঘটে। চিন্তার প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বনের স্নান, কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায়। স্মরণ শক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে। অপরাধ প্রবণতা কমায়। এখানে হাইকিংয়ের চেয়ে অনেক ধীরগতিতে হাঁটা হয় আর এতে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ভ্রমণ। ২০১১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ব্যক্তি শহরের রাস্তায় হাঁটেন, তাঁদের চেয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে যাঁরা হাঁটেন, তাদের রক্তচাপ তুলনামূলক কম। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিঃশ্বাসের মাধ্যমে সিডার (দারূবৃক্ষবিশেষ) গাছের গন্ধ প্রবেশ করলে শরীরে স্ট্রেস প্রতিরোধক উপাদান আরো শক্তিশালী হয়। সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে, বন-স্নান মেজাজ উন্নত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বন-স্নানে হতাশা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, রাগ, ইত্যাদি প্রশমিত হয়। তাছাড়া ইমিউন সিস্টেম শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়ায়, যা রোগের জীবাণুকে নষ্ট করে দেয় ও অস্ত্রোপচারের পর শরীরকে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।

“এতটুকু স্নেহ আর মমতার জন্য আমি কতবার নিঃস্ব কাঙালের মতো সবুজ বৃক্ষের কাছে যাই। বৃক্ষ, তোমার পাতায় পাতায় শিরা উপশিরায় দেখি জলের পতন। বৃক্ষ তুমি কাঁদছ কেন? তুমি তো শিকড়িত। তোমার শেকড় মৃত্তিকার প্রাণের প্রদীপ। তোমার হৃদয়ের ডালপালা মেলে ছড়িয়ে আছে আদিগন্ত। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে তোমার মোহন সুর। তুমি কাঁদাও, হাসা্‌ও, আশ্রয় দাও। অথচ এই মুহূর্তে দেখো তোমার ঘন পল্লবের ছায়ায় এক মানব দাঁড়িয়ে। কক্ষচ্যুত। তুমি তারও আশ্রয়। হে বৃক্ষ আমাকে তুমি এতটুকু ভালোবাসা দাও”।

 

ঘুমিয়ে থাকে বৃক্ষ-শিশু, গাছপালা ফিসফিসিয়ে কথা বলে 

সাঁঝের জঙ্গলে চারদিকে নীরব নির্জনতা বিরাজ করে। মাঝে মাঝে মর্মর ধ্বনি শোনা যায়। আর গাছের গোড়ায় ফিস ফিস ফিস কথা। বাতাসে ভেসে বেড়ায় সুরের সুরধনী। কে? কে কথা বলে? দু'হাত দূর থেকেও সেসব কথা বোঝা সম্ভব হয় না। গাছেরা সত্যি কি কিছু বলে? অনেকে বলবেন, এ আবার কেমন প্রশ্ন? গাছ কি কোনো দিন কথা বলে থাকে? মানুষেই কি সব কথা মুখ ফুটে বলে? আর যা বলে না, তা কি কথা নয়? এই যে গাছেরা কোনো কথা বলে না, তাদেরও তো একটা জীবন আছে, আমাদের মতো তারাও আহার করে, দিন দিন বাড়ে। জীবনধারণ করবার জন্য সর্ব্বদা ব্যস্ত থাকে। বৃক্ষদের মধ্যে তারা একে অন্যকে সাহায্য করে, জড়িয়ে বাঁচে; এদের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়, বংশ বৃদ্ধিও হয়। 

যদিও প্রকৃ্তিতে অনেক পরগাছা (Mistletoe) রয়েছে যেসব গাছ অন্য গাছের ওপর জন্মায় ও পরিবর্তিত মূলের সাহায্যে তাকেই আশ্রয় করে বাঁচে। যেমন Loranthaceae গোত্রের সপুষ্পক গুল্ম। এসব গাছের ডাল বা কাণ্ডে অর্কিড, বাঁদরা, বন্দা, ইত্যাদি নানা জাতের পরগাছা দেখা যায়। এরা এক ধরনের বিশেষ শিকড় ‘চোষক-মূল’ বা হস্টোরিয়াম আশ্রয়দাতা বা পোষক গাছের বাকলের ফাটলে প্রবেশ করিয়ে তার দেহ থেকে জৈব খাদ্য শর্করা, জল, খনিজ বা পুষ্টি গ্রহণ করে। তবে পোষক গাছের ওপর বন্দার মতো পরগাছারা পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল নয় কারণ এর সবুজ পাতা থেকে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি হয় শর্করা-জাতীয় খাবার। তাই এরা হলো আংশিক পরজীবী। আবার স্বর্ণলতা মাটিতে জন্মায়। আশপাশের কোন গাছকে পোষক হিসেবে বেছে নিয়ে সেই গাছ বেয়ে উঠে পড়ে এই লতা, তারপর চোষকমূল বিস্তার করে বেঁচে থাকে। এরা হল ঘোর-পরজীবী। এদের দেহে কোনো সালোকসংশ্লেষণ হয় না, তাই সম্পূর্ণভাবে পোষক গাছের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। অর্ধপরজীবী বা হেমিপ্যরাসাইট গাছ শ্বেতচন্দন (Santalum album) অন্য গাছের শেকড়ের ওপর জন্মে তার থেকেও জল ও খনিজ-পুষ্টি সংগ্রহ করে এবং বাকি জৈব-খাবার শর্করার অভাব পূরণ করে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে। 

No photo description available.

অর্কিডে যদি চিতাবাঘের মত বলয়ছোপ থাকে তাহলে তার বৈজ্ঞানিক ও ইংরাজী নাম হবে Bulbophyllum leopardinum। Leopard Bulb-Leaf Orchid

অনেক পরগাছা আকর্ষণীয় ফুল ও ফল উৎপন্ন করে। পাখিরা এদের বীজের অঙ্কুরোদগমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বীজসহ ফল পাখিরা খায়, কিন্তু বীজ হজম না হওয়ায় তা মলের সাথে বের হয়ে আসে। এ বীজ গাছের ডালের ওপর পড়ে অঙ্কুরিত হয় ও বাড়তে থাকে। যেমন বন্দা-ফলের আঁটির গায়ে চুইংগামের মতো এক ধরনের চটচটে আঠা (Viscum) থাকে। এই আঠা বন্দার বংশবিস্তার করার প্রাকৃতিক কৌশল। এই উচ্চমানের পুষ্টিযুক্ত ফল খাওয়ার সময় পাখিদের ঠোঁটের চাপে বন্দার রসালো ফল ফেটে যায়। কখনো আঁঠালো বীজ লেগে যায় ঠোঁটের এক পাশে। এরপর পাখিরা যখন উড়ে গিয়ে ভিন্ন ডালে বা ভিন্ন গাছে বসে এবং ঠোঁট ঘষে পরিষ্কার করে তখন ওই বীজ লেগে যায় ডালে। কখনো বিষ্ঠার সাথে এই বীজ বের হয়। এই আঠায় আটকানো বীজ থেকেই সাধারণত বন্দা গাছ জন্মায়। বর্ষাকালে পরগাছার বীজ বিস্তার লাভ করে। আবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফলের গাছ, শাল, সেগুন, গামারি ইত্যাদি বনজ গাছ পরগাছার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পোষক গাছের সতেজতা ও বৃদ্ধির হার কমে যায়, দুর্বল ফল ও বীজ উৎপন্ন হয়, আগা শুকিয়ে যায়, বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয় ও অনেক সময় তারা অকালে মারা যায়।

অরণ্য অঞ্চল সাধারণত ছত্রাকে পরিপূর্ণ থাকে। মাটির ভেতরে ছত্রাকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গাছেরা একে অন্যের সাথে কথা বলে, নিজেদের শক্তি ও পুষ্টি আদান-প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে ছত্রাক অনেকটা ইন্টারনেটের মতো কাজ করে। তাদের ভাষা হচ্ছে রাসায়নিক। বিজ্ঞানীরা এই ছত্রাকের নেটওয়ার্কের নাম দিয়েছেন - উড ওয়াইড ওয়েব। কিছু গাছ বিপদ থেকে সাবধান করে বা পুষ্টি বিতরণ করে চারাগাছকে বাঁচতে সাহায্য করে। গাছপালা শুধুমাত্র যোগাযোগই করে না, তারা একে অন্যের দেখাশোনাও করে। আবার কিছু গাছ অন্যের শক্তি ও পুষ্টি লুটে নেওয়ার চেষ্টা করে। 'প্রসিডিংস অফ দি ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অফ সাইন্স'-র জাপানি গবেষকরা একটি রাসায়নিক বার্তাকে সনাক্ত করেছেন এবং বার্তাটি এক গাছ থেকে অন্য গাছে পৌঁছানো পর্যন্ত একে চিহ্নিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড্যান জনসন বলেন, শব্দতরঙ্গ পরিমাপক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফণীমনসা উদ্ভিদ প্রজাতির অতি সূক্ষ্ম শব্দ তৈরির সামর্থ্যের প্রমাণ মিলেছে। তীব্র খরার সময় উদ্ভিদের এ ধরনের শব্দ বিনিময়ের হার বেড়ে যায়। 

Image may contain: tree, plant, outdoor and nature

বনে রাত যত বাড়ে, কথাও তত বাড়তে থাকে। একটা গাছ আর একজনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। কথা এগিয়ে চলে। চলে ওদের ভালবাসা। ঘনিষ্টতাও বাড়তে থাকে। ঘনিষ্টতা বাড়তে বাড়তে একসময় ভালবাসি বলে হারিয়ে যায় একজন আর একজনের মাঝে। ভালবাসায় এক অন্য রকম খেলা খুঁজে পায় ওরা। ভালবাসাকে ছাপিয়ে সে খেলা ওদের অন্যরকম আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। 

নিশাচর আমার আমি জেগে আছি নির্ঘুম দু'চোখ মেলে, ঘন সবুজ পাতায় ঢাকা কোনো গাছের তলায়। গাছের নীচে এক পাশে একটা শুকনো ডাল পড়ে আছে। এক সময় এই ডালে কত পাতা ছিল, এখন সব শুকিয়ে গেছে, আর ডালের গোড়ায় উই ধরেছে। আর কিছুকাল পরে এর চিহ্নও থাকবে না। এই গাছ আর এই মরা ডালে কি প্রভেদ? গাছটা বাড়ছে; আর মরা ডালটা ক্ষয় হয়েছে; একটাতে জীবন আছে, আর অন্যটিতে জীবন নেই। যা জীবিত, তা ক্রমশঃ বাড়তে থাকে। জীবিতের আর একটি লক্ষণ এই যে, তার গতি আছে, অর্থাৎ তারা নড়ে চড়ে। গাছের গতি হঠাৎ দেখা যায় না। লতা কেমন করে ঘুরে ঘুরে গাছকে জড়িয়ে ধরে।

গাছের বীজের মধ্যেও গাছের শিশু ঘুমিয়ে থাকে। বীজগুলিই গাছের সন্তান। বীজ রক্ষা করবার জন্য ফুলের পাপড়ি দিয়ে গাছ একটা ক্ষুদ্র ঘর বানায়। ফুলের মধ্যে বীজ পাকে। গাছের মধ্যে হাজার হাজার নল আছে। এইসব নল দিয়ে মাটি থেকে গাছের শরীরে রস প্রবেশ করে। শরীরের রস দিয়ে গাছ বীজগুলোকে লালন পালন করে। মাটির উত্তাপ ও জল পেলে বীজ থেকে বৃক্ষশিশুর জন্ম হয়। বীজের ওপর এক কঠিন ঢাকনার মধ্যে বৃক্ষ-শিশু নিরাপদে নিদ্রা যায়। বীজের আকার নানাপ্রকার - কোনোটি অতি ছোট, কোনোটি বা বড়। বীজ দেখে গাছ কত বড় হবে, বলা যায় না। যত গাছপালা, বন-জঙ্গল আছে তার অনেকের বীজই মানুষ ছড়ায় নি, অন্য নানা উপায়ে তা ছড়িয়েছে। পাখীরা ফল খেয়ে দূরান্তরে বীজ ছড়ায়। এইভাবে জনমানবশূন্য দ্বীপেও গাছ জন্মায়। এছাড়া অনেক বীজ প্রবল বাতাসে উড়ে অনেক দূর-দেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেক বীজ থেকে গাছ জন্মে কি না, কেউ বলতে পারে না। হয়ত কঠিন পাথরের ওপর বীজ পড়ল, সেখানে তার অঙ্কুর বার হতে পারল না। অঙ্কুর বার হবার জন্য উত্তাপ, জল ও মাটি চাই। যেখানেই বীজ পড়ুক না কেন, বৃক্ষ-শিশু অনেক দিন পর্যন্ত বীজের মধ্যে নিরাপদে ঘুমিয়ে থাকে। বেড়ে ওঠার মতো  উপযুক্ত স্থানে যতদিন না পড়ে, ততদিন বাইরের কঠিন আবরণ গাছের শিশুটিকে নানা বিপদ থেকে রক্ষা করে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বীজ পাকে। হয়তো একটি বীজ সমস্ত দিন-রাত্রি মাটিতে লুটোতে লুটোতে একখানা ভাঙ্গা ইট কিংবা মাটির ডেলার নীচে আশ্রয় পেয়ে বাইরের শীত ও ঝড় থেকে রক্ষা পেল। এইরূপে নিরাপদে বৃক্ষ-শিশুটি ঘুমিয়ে থাকে। মৃত্তিকার নীচে অনেক দিন বীজ লুকিয়ে থাকে। মাসের পর মাস এই ভাবে কেটে যায়। শীতের পর বসন্ত আসে। তারপর বর্ষার প্রারম্ভে দুই-এক দিন বৃষ্টি হয়। এখন আর তার লুকিয়ে থাকবার প্রয়োজন নাই। বাইরে থেকে কে যেন শিশুকে ডেকে বলে, ‘‘আর ঘুমিও না, ওপরে উঠে এস, সূর্য্যের আলো দেখবে।” আস্তে আস্তে বীজের ঢাকনাটি খসে পড়ে, দু'টি কোমল পাতার মাঝ থেকে অঙ্কুর বার হয়। অঙ্কুরের এক অংশ নীচের দিকে গিয়ে দৃঢ়ভাবে মাটি কামড়ে থাকে, আর এক অংশ মাটি ভেদ করে ওপরে ওঠে। অঙ্কুর উঠলে মনে হয় শিশুটি যেন ছোট মাথা তুলে আশ্চর্য্য হয়ে নতুন দেশ দেখছে।

সুন্দরবনে আবার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অভিযোজন জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম। বেশিরভাগ লবণাম্বুজ উদ্ভিদ যথা গর্জন, গরাণ, কেওড়া, কাঁকড়া, বোরা, খলসি, হারগোজা প্রভৃতির জরায়ুজ অংকুরোদগম হয়ে থাকে। অন্যদিকে সুন্দরী ও গেওয়া জাতীয় উদ্ভিদে জরায়ুজ অংকুরোদগম দেখা যায় না। মূলতঃ এই জাতীয় উদ্ভিদের বীজ জোয়ার-ভাঁটার টানে যাতে ভেসে না যায়, সেজন্য ফল বা বীজ উদ্ভিদে যুক্ত থাকা অবস্থাতেই বীজের অঙ্কুরোদ্গম হয়। অঙ্কুর অবস্থায় শুধু প্রধান মূলটি বীজ থেকে বেড়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। মূল বড় ও ভারী হলে ফলটি নিচের নরম কাদামাটিতে খসে পড়ে খাড়াভাবে ঢুকে আটকে যায় এবং শীর্ষমুকুল চারায় পরিণত হয়। 

সম্বর হরিণ 

জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বিলাসী পাতা ফুল হয়ে যায়!

গাছে ফুলের আগমন ঘটে বংশবৃদ্ধির প্রয়োজনে। ফুল থেকে ফল হয়, আর ফল থেকে বীজ। সেই বীজ থেকে আবার একই ধরনের গাছ হয়। ব্যতিক্রমও আছে যেখানে বীজ ছাড়াই গাছের কাণ্ড থেকে বংশবৃদ্ধি হয়। যেসব গাছ বীজ থেকে বংশবৃদ্ধি করেনা তারাও অনেকেই ফুল দেয়। সেই ফুল আমাদের আনন্দ দেয়। আসলে ফুল গাছের এক বিশেষ ধরনের বিলাসী পাতা। কাণ্ড প্রাকৃতিক নিয়মে গাছের পাতা তৈরীর কাজ অবিরাম করে যায়। কিন্তু গাছ যখন স্পষ্ট বিশেষ ধরনের সংকেত পায় তখন সে পাতা তৈরীর বদলে ফুল তৈরী করে। বিশেষ সংকেতটি একটি রাসায়নিক বস্তু যার নাম ফ্লোরিজেন- এক প্রকার স্বতঃসিদ্ধ হরমোন, যা পাতায় উৎপন্ন হয়ে পত্রমূলে স্থানান্তরিত হয় এবং পত্রমুকুলকে পুষ্পমুকুলে রূপান্তরিত করে। এর ফলে উদ্ভিদে ফুল উৎপন্ন হয়। যে সব গাছে পাতা নেই তারা সবুজ কান্ড থেকে ফ্লোরিজেন তৈরী করে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে  ফ্লোরিজেন তৈরী হয়। যেমন কোনো কোনো প্রজাতির গাছে  দিন যখন বড় এবং রাত খুব ছোট থাকে (গরম কালে) তখন এটি তৈরী হয়। আবার কিছু গাছে শীতকালে যখন দিন খুব ছোট হয় ও রাত বড় থাকে তখন  ফ্লোরিজেন তৈরী হয়, তাই এদেরকে আলোক সংবেদনশীল বলে। আবার অনেক প্রজাতির গাছ আছে যাদের দিনের আলো বাড়া বা কমার ওপর ফ্লোরিজেন তৈরীর কোন সম্পর্ক নেই। এরা আলোক নিরপেক্ষ। এই শ্রেণীর গাছে একটা নির্দিষ্ট বয়স পার হলেই ফুল আসে। বড় হলেই এই শ্রেণীর গাছে বারোমাসই ফ্লোরিজেন তৈরী হয়। এমন প্রজাতির গাছও আছে যারা কিছুদিন কম তাপমাত্রায় না থাকলে ফুল দেয় না। একে বলে স্থানিককরণ। যেমন টিউলিপ, ডেফোডিলস, ক্রোকাস সহ নানা প্রকার লিলি জাতীয় ফুলের গাছ।  অনেক ফলের গাছও আছে যেমন আপেল, নাশপাতি  যা ঠান্ডা আবহাওয়ার দেশ ছাড়া ফুল দেয় না। ঠান্ডা থেকে পাওয়া আবেশ থেকে এসব গাছে ফুল আসে। প্রতুল বা অপ্রতুল ফ্লোরিজেনের প্রভাবে গাছে কখনও ফুল আসে বা আসে না, বরং স্বাভাবিক নিয়মে গাছে তখন পাতাই তেরী হয়। কোন গাছে কখন ফ্লোরিজেন তৈরী হবে তা বিবর্তনের সময় বংশানুক্রমে ঠিক করা আছে। ব্যতিক্রমের মধ্যে আছে কিছু জাতের অর্কিড আর লিলি।

বাস্তবে এরকম আরো অনেক আশ্চর্য ঘটনা জীবজগতে ঘটে চলেছে আমাদের অগোচরে।

 

চিত্র ঋণ - সুব্রত পালচৌধুরী, অনুরাধা বিশ্বাস, সপ্তর্ষি রক্ষিত, রুণা মল্লিক ও জয়ন্ত কুমার মল্লিক

 

1 Comments
  • avatar
    JYOTIRINDRANARAYAN LAHIRI

    28 April, 2025

    অসাধারণ একটি লেখা৷ জঙ্গলকে গভীরভাবে জানলে তবেই এমন লেখা সম্ভব৷

Leave a reply